ঈদে মিলাদুন নাবী (সা) উদযাপন কি সত্যই বেদাত, না আবশ্যকিয়?

0 539

লেখকঃ জনাব টিপু সুলতান, প্রভাশক ইংরেজি বিভাগ

সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া

(কিছু পোস্টের উত্তরে কথাগুলি বলার তাগিদ অনুভব করেছি)

১। মহানবীর (সাঃ) জন্ম বা মৃত্যুদিবস পালন বিদআত নয়, বরং তা মহান আল্লাহর অনুমোদিত বা রীতিসিদ্ধ। একটু ব্যাখ্যা করে বলি। লাইলাতুল কদর কেন এত সম্মানিত রাত, কেনই বা হাজার মাসের চাইতে শ্রেষ্ঠ, আর কেনই বা সেই রাত ফজর পর্যন্ত বরকতময়, শান্তিময়? কারণ সেটা কোরআন নাজিলের রাত, আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য মহা অনুগ্রহ তথা রহমত বরকত নাজিলের রাত। তাহলে যে মহানবী সাঃ এর উপর কোরআন নাজিল হলো, যাঁকে মহান আল্লাহ বলছেন “নিশ্চয় আমি আপনাকে জগতসমূহের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি” (আম্বিয়া ১০৭), তাঁর জন্মদিনটা কেন বরকতময় এবং আমাদের জন্য উদযাপনযোগ্য হবে না? মহান আল্লাহতো বলেই দিয়েছেন:
“বল, আল্লাহর দয়া ও মেহেরবাণীতে তারা আনন্দ প্রকাশ করুক। এটিই উত্তম তার সবকিছু হতে যা তারা সঞ্চয় করে।” (ইউনূস:৫৮)
সহীহ হাদীসের মুখোশধারীরা কি কোরআন পড়েন না? তারা কি দেখেন না যে মহান আল্লাহ ইয়াহিয়া আঃ এবং ঈসা আঃ এর জন্ম, মৃত্যু ও পুনরুত্থানের দিবসকে বিশেষ দিবস হিসেবে তাদেরকে সালাম জানিয়ে অভিনন্দিত করেছেন? (দেখুন: সুরা মারইয়াম: আয়াত ১৫, ৩৩)
তারা কি কোরআনে অসংখ্য আয়াতে মহান আল্লাহ কর্তৃক বিভিন্ন দিবস স্মরণ করার নির্দেশনা দেখতে পান না?
সূরা ইব্রাহিমের ৫ নং আয়াতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুসা আঃ কে আল্লাহর দিবসসমূহ স্মরণ করানোর মাধ্যমে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে আহবান করতে বলেছেন: “তুমি তোমার কওমকে অন্ধকার হতে আলোর দিকে বের করে আন এবং আল্লাহর দিবসসমূহ তাদের স্মরণ করিয়ে দাও। নিশ্চয় এতে প্রতিটি ধৈর্যশীল, কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য রয়েছে অসংখ্য নিদর্শন।”
তাহলে যে রাসূলকে আল্লাহ আমাদের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন সেই রাসূল সাঃ এর আগমনের ঘটনাকে বিশেষভাবে স্মরণ না করা এবং আল্লাহর সেই রহমতে আনন্দ অনুভব না করাটাই নিশ্চয় মহান আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার সামিল।

যাঁকে মহান আল্লাহ সুবহানাল্লাহু তায়ালা সুসংবাদদাতা, এবং আল্লাহর দিকে আহবায়করূপে এক উজ্জ্বল প্রদীপরূপে প্রেরণ করেছেন (আহযাব ৪৫, ৪৬), যাঁকে মহান আল্লাহ নিজে বলছেন, “নিশ্চয় (হে রাসূল) আপনি সরল পথ প্রদর্শন করেন” (শুরা: ৫২), যে রাসূলের উপর মহান আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতাগণ দরুদ প্রেরণ করেন (আফতাব: ৫৬), সেই রাসূলের জন্মদিন যদি আল্লাহর দিবস না হয়, সেই দিবস যদি আলাদাভাবে স্মরণ করার দিবস না হয়, তবে আর কোনটি হবে???

অতএব, ইসলামের ইতিহাসের নানান ঘটনা স্মরণ এবং সেগুলি থেকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য আয়োজিত কোনো অনুষ্ঠান মহান আল্লাহর নির্দেশনা পালন মাত্র, এতে বেদআতের প্রশ্নই ওঠে না।

ওহাবীদের সমস্যা আসলে অন্যখানে। তারাও দিবস পালন করে, যদি সেই দিবস পালন ইতিহাসের কোনো সত্যকে আড়াল করার প্রয়োজনে হয়। যেমন, মহররম বা আশুরা এলে তারা কারবালায় তাদের পূর্বসূরীদের কুকীর্তি আড়াল করতে মুসা আঃ এর কওমকে ফেরাঊনের বাহিনীর উপর বিজয় এর কথা তুলে আনে, তুলে আনে আরও অনেক ইতিহাস (!)
কিন্তু মহানবী সাঃ এবং তাঁর পবিত্র বংশধারার মর্যাদা প্রকাশক বিষয়গুলোকে শিরক আর বিদআত ট্যাগ লাগিয়ে মুসলিম উম্মাহর কাছ থেকে সত্য আড়াল করতে চায়, সেটা জেনেবুঝে হোক, কিংবা না বুঝে অন্ধ অনুকরণের ফলস্বরূপই হোক। (তাঁদের মুরুব্বিগণ অবশ্য জেনে বুঝেই সব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে)।
এরা অপবিত্র উমাইয়াদের বংশধর বা ভাবশিষ্য। এরা শয়তানের সুযোগ্য অনুসারী। এর পক্ষে যুক্তি হলো, ইবলিশ শয়তান চারবার বিলাপ করে কেঁদেছে, তার মধ্যে একবার যখন মহানবী সাঃ জন্মগ্রহণ করেন। আর আজ শয়তানের অনুসারীরাই রাসূল সাঃ এর জন্মদিবস উদযাপন দেখলেও চিৎকার চেঁচামেচি করছে।
রাসূল সাঃ হলেন ইসলামের ইতিহাসের প্রাণকেন্দ্র, নিউক্লিয়াস।
আমাদের উচিত মহান রাসূল সাঃ এর জন্ম এবং ওফাত স্মরণে বেশি বেশি অনুষ্ঠান করে তাঁর জীবনের নানান দিক এবং প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য (আড়াল করা) বিষয়গুলি সকলের সামনে নিয়ে আসা। শুধু জন্ম আর মৃত্য নয়, মহানবীর জীবনের সব বিশেষ ঘটনার দিবসও আলোয় নিয়ে আসা প্রয়োজন। বদর, খন্দক, ওহুদ, খায়বার, হুনাইন সব। আমাদের জানা উচিত ওহুদের প্রান্তর হতে রাসূল সাঃ এর নির্দেশ অমান্য করে, তাঁকে বিপদে ফেলে কারা পালিয়ে গিয়েছিল! আমাদের জানা উচিত হুনাইনের যুদ্ধের পলায়নকারী কারা! করা তাবুকের যুদ্ধ থেকে রাসূল সাঃ ফেরার পথে হত্যার চেষ্টা করেছিল!! আমাদের জানা আবশ্যক, রাসূল সাঃ এর মৃত্যুর মাত্র দিন কয়েক পূর্বেও কোন সাহাবারা তাঁর আদেশ অমান্য করেছেন!!
ওহাবীরা কিংবা যারা সত্যের সাক্ষ্য দিতে ভয় পায় তারা যুগে যুগে, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এগুলো আমাদের কাছ থেকে আড়াল করতে চাইছে।

২। যাদের অন্তরে রোগ রয়েছে, তাদেরকে দলিল প্রমাণ দিলেও মানবে না। এর প্রমাণ হলো, অনেক ওহাবীকে হাদীসে সাকালাইন, যেখানে রাসূলুল্লাহ সাঃ কোরআন এবং তাঁর পবিত্র বংশধর অর্থাৎ তাঁর আহলে বাইতকে আঁকড়ে ধরাটাকে আমাদের পথভ্রষ্ট না হবার প্রথম ও প্রধান শর্ত করেছেন (তিরমিজি ৩৭৮৬, ৩৭৮৮; মুসলিম ৬০০৭, ইত্যাদি) সেটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে কোনো না কোনো ভাবে বাইপাস করে যাবে; কিন্তু তাঁরা কোরআন ও সুন্নাহ বা হাদীস আঁকড়ে ধরার মুরসাল হাদীস প্রচার করে বেড়ায় যেটা সিহাহ ছিত্তাহ’র কোনো হাদীস গ্রন্থেই নেই, অন্য যেসব গ্রন্থে আছে সেখানেও কোনো রাবীর নাম উল্লেখ নেই!! ওহাবীরা এ বিষয়ে চ্যালেঞ্জ নেবার সাহস রাখে না।

পুনশ্চ: সহীহ হাদীসের ফেইক লেবেল লাগানো পাবলিক সম্পর্কে আমার মূল্যায়ন হলো, এদের বেশিরভাগই খুব কম পড়াশোনা করা মানুষ, কিংবা, কাটছাঁট করা বই পড়া মানুষ। এমনকি অনেকে শুধু তার গুরুজনেরা যা বলেছে তারই কেবল চর্বিতচর্বন করতে থাকে। পেট্রো ডলারের শেকড় উপড়ে যাওয়া পর্যন্তই পরগাছাগুলির আয়ু _ আমার বিশ্বাস।

Leave A Reply

Your email address will not be published.