ইমলাম ধর্মের আটটি মৌলিক বিষয়।

0 579

লিখেছেনঃ জনাব আলী নেওয়াজ খান।

ইমাম জাফর সাদিক (আ.)এর জনৈক শিষ্যের ভাষায় ধর্মের আটটি মৌলিক বিষয়

ইমাম জাফর সাদেক (আ.) কোন একদিন আপন শিক্ষার্থীদের জিঙ্গেস করলেন: এতদিন তোমরা আমার কাছে কি শিখেছো ?
জনৈক শিক্ষার্থী বললেন: আমি আটটি বিষয় শিখেছি ।
ইমাম বললেন: সেগুলো কি আমাকে বলতে পারবে ?

১. শিক্ষার্থী বললেন: আমি প্রত্যক্ষ করেছি মৃত্যুর সময় প্রত্যেক প্রিয়জন তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং একে অপরকে ছেড়ে চলে যায় । তাই আমার সকল প্রচেষ্টা এমন কাজে নিয়োজিত করেছি যা কখনো আমাকে একাকী রেখে চলে যাবে না বরং দু:সময়ে আমার সহযোগী হিসাবে পাশে থাকবে আর সেটা হল সৎকর্ম যা মৃত্যুর পরও আমার সাথে অবস্থান করবে । যেমনটি মহান প্রতিপালক বলেছেন : مَنْ يَعْمَلْ سُوءاً يُجْزَ بِه প্রত্যেকে তার মন্দ কাজের শাস্তি পাবে । সুরা নিসা ১২৩ নম্বর আয়াত ।
ইমাম বললেন : মাশাল্লাহ, খুবই সুন্দর ।

২. আমি দেখেছি লোকেরা তাদের বংশপরিচয়, পদ-মর্যাদা তাদের অর্থসম্পদ ও সন্তান সন্তানাদি নিয়ে গর্ববোধ করে থাকে অথচ এসবের মধ্যে কোন গর্ব নেই । বরং প্রকৃত গর্বের বিষয় মহান প্রতিপালকের এই কথার মধ্যে নিহীত রয়েছে যে, তিনি বলেন اِنَّ اَكرَمَكُم عِندَاللهِ اَتقيكُم (তোমাদের মধ্য থেকে ঐব্যক্তি সর্বোত্তম যে তাকওয়ার দিক থেকে অগ্রগামী)
অতপর চেষ্টা করেছি পরহেজগার হওয়ার মাধ্যমে মহান প্রতিপালকের প্রিয় হতে ।(সুরা আল হুজুরাত -১৩ নম্বর আয়াত)
ইমাম বললেন: মাশাল্লাহ, খুবই সুন্দর ।

৩. আমি দেখেছি অধিকাংশ মানুষ খেল-তামাশা ও আনন্দ-ফূর্তিতে তাদের সময় অতিবাহিত করে থাকে । অথচ প্রতিপালক বলেছেন : واَما مَن خافَ مَقامَ رَبِّهِ وَ نَهَى النَّفسَ عَنِ الهَوى فَإِنَّ الجَنَّةَ هِىَ المَأوى আর যেব্যক্তি তার প্রতিপালকের মহামর্যাদার সম্মুখে পাপকাজে ভয় পায় এবং খেয়াল-খুশী থেকে নিজেকে নিবৃত রেখেছে নি:সন্দেহে তার অবস্থান হবে জান্নাত। (সুরা আন নাযিয়াত ৪০ নম্বর আয়াত) । অতপর খেয়াল-খুশীর অনুসরণ পরিত্যাগ করে প্রতিপালকের ইবাদত ও আনুগত্যে নিজেকে মশগুল রেখেছি ।
ইমাম সাদেক (আ.) বললেন: মাশাল্লাহ, খুবই সুন্দর ।

৪. আমি লক্ষ্য করেছি প্রত্যেকে অর্থ-সম্পদ অর্জন ও সংরক্ষণে অতিশয় তৎপর অথচ তারা প্রভুর এই কথাটি ভুলেগেছেন :
مَنْ ذَا الَّذِي يُقْرِضُ اللَّهَ قَرْضاً حَسَناً فَيُضَاعِفَهُ لَهُ وَ لَهُ أَجْرٌ کَرِيمٌ‌ আর যেব্যক্তি আল্লাহকে (আল্লাহর পথে) উত্তম ঋণ দিবে অতপর আল্লাহ সেটাকে কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে দিবেন এবং পরিশেষে তাকে অতিউত্তম প্রতিদান দেয়া হবে। (সুরা হাদীদ ১১ নম্বর আয়াত) । অতএব আমিও আমার সম্পদ বৃদ্ধি পছন্দ করি আর এজন্যেই মহান প্রতিপালকের চেয়ে উত্তম রক্ষক কাউকে দেখি না। তাই যখন ভালকিছু অর্জন করেছি সেটা আল্লাহর পথে খরচ করেছি । যা আমার পরকালের সঞ্চয় হিসাবে থাকবে এবং সেদিন খুবই প্রয়োজনে আসবে ।
ইমাম বললেন: মাশাল্লাহ, খুবই সুন্দর ।

৫. আমি দেখেছি লোকেরা একে অপরের প্রতি হিংসায় লিপ্ত থাকে অথচ প্রভু বলেছেন:
أَ هُمْ يَقْسِمُونَ رَحْمَةَ رَبِّکَ نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُمْ مَعِيشَتَهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَ رَفَعْنَا بَعْضَهُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِيَتَّخِذَ بَعْضُهُمْ بَعْضاً سُخْرِيّاً وَ رَحْمَةُ رَبِّکَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ‌ (32) তারা কি আপনার পালনকর্তার রিজিক বন্টন করে ? আমিই তাদের মধ্যে তাদের পার্থিব জীবনের জীবিকা বন্টন করে থাকি । এবং একজনকে অন্যের উপর অগ্রাধিকার দিয়েছি যাতে তার প্রয়োজন নিবারণে অন্যকে কাজে লাগিয়ে পরস্পারিক সহযোগীতায় তারা পরস্পরের চাহিদা পুরণ করতে পারে । তারা দুনিয়াতে যা সঞ্চয় করে আপনার পালনকর্তার অনুগ্রহ তদাপেক্ষা উত্তম (সুরা যুখরুফ ৩২ নম্বর আয়াত)
অতএব যখন আমি জেনেছি লোকজন যা সঞ্চয় করে তদাপেক্ষা আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ সর্বব্যাপী তখন আর কারো প্রতি হিংসা করিনি এবং পার্থিব্য যাকিছু হাতছাড়া হয়েছে তার জন্যেও কোন অনুতাপ করিনি ।
ইমাম জাফর সাদেক (আ.) বললেন : মাশাল্লাহ, খুবই সুন্দর ।

৬. আমি লক্ষ্য করেছি সমাজের লোকেরা লোভ লালসার বশিভুত হয়ে পার্থিব্য বিষয়াদি নিয়ে একে অপরের সাথে শত্রুতা করে অথচ প্রভুর এই বানী আমাকে প্রকৃত শত্রু চিনতে সাহায্য করেছে । তিনি বলেন :

إِنَّ الشَّيْطَانَ لَکُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوهُ عَدُوّاً إِنَّمَا يَدْعُو حِزْبَهُ لِيَکُونُوا مِنْ أَصْحَابِ السَّعِيرِ
নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু । তোমরা তার সাথেই শত্রুতা কর। নিশ্চয় সে তার দলের অর্ন্তভুক্তদেরকে জাহান্নামের দিকে আহ্বান করে থাকে। (সুরা ফাতের ৬ নম্বর আয়াত)।
অতএব আমি প্রকৃত শয়তানের সাথে শত্রুতায় নেমেছি আর অন্যদের সাথে শত্রুতা করা পরিত্যাগ করেছি ।
ইমাম সাদেক (আ.) বললেন: মাশাল্লাহ, খুবই সুন্দর ।
৭. আমি লক্ষ্য করেছি সমাজের লোকজন রুজি রোজগারের জন্য হা-হুতাশ করে নিজেকে পরিশ্রান্ত করে ফেলেন অথচ মহান প্রতিপালক বলেছেন:
وَ مَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَ الْإِنْسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُونِ‌
আমি জ্বীন ও মানুষকে একমাত্র আমার পরিচিতি ও বান্দেগীর [মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভের] জন্য সৃষ্টি করেছি।
مَا أُرِيدُ مِنْهُمْ مِنْ رِزْقٍ وَ مَا أُرِيدُ أَنْ يُطْعِمُونِ‌
আমি তাদের কাছে জীবিকা চাই না বা চাই না তারা আমার আহার যোগান দিবে !
إِنَّ اللَّهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِينُ‌
নিশ্চয় আল্লাহ-ই জীবিকাদাতা, শক্তির আধার, পরাক্রান্ত । [সুরা আল যারিয়াত ৫৬-৫৮ নম্বর আয়ত]
অতএব আমি নিশ্চিত হয়েছি মহান প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি সত্য এবং বানী সঠিক । অতপর আমি আমার প্রভুর কথায় ভরসা করে শান্ত ও সন্তুষ্ট হয়েছি এবং আমার প্রতি আল্লাহ যে অনুগ্রহ করেছে সেদিকে মনযোগী হয়েছি। আর অন্যের হাত থেকে নিজের প্রাপ্য গ্রহণ করা থেকে বিরত হয়েছি।
ইমাম বললেন : মাশাল্লাহ, খুবই সুন্দর ।

৮. আমি লক্ষ্য করেছি সমাজের একদল মানুষ তাদের দৈহিক সুস্থতা ও শক্তির উপর, আবার কেউ সহায়-সম্পত্তির উপর আবার কেউ দল-বল বা সন্তান সন্তানাদির আধিক্যের উপর ভরসা করে গর্বিত ও পরিতুষ্ট । অথচ আমি শুনেছি মহান প্রতিপালক বলেছেন :
وَ مَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجاً
যেব্যক্তি (পাপ কাজ করতে) আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তাকে মুক্তির পথ বের করে দেন ।
وَ يَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِبُ وَ مَنْ يَتَوَکَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ إِنَّ اللَّهَ بَالِغُ أَمْرِهِ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لِکُلِّ شَيْ‌ءٍ قَدْراً
এবং তাকে এমন স্থান থেকে রিজিক দেবেন যা সে কল্পনা করেনি । আর যেব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করবে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট, আল্লাহ তার কাজকে পূর্ণ করে দিবেন । আল্লাহ প্রত্যেকটি জিনিসের জন্য একটি র্নিধারিত অবস্থান দিয়েছেন ।
وَ مَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مِنْ أَمْرِهِ يُسْراً
যেব্যক্ত (পাপ কাজ করতে) আল্লাহকে ভয় পায় তার কাজগুলো সহজ করে দিবেন ।
অতএব আমি আল্লাহর উপর ভরসা করেছি এবং অন্যদের থেকে সকল আশা পরিত্যাগ করেছি । [সুরা আল তালাক ২-৪ নম্বর আয়াত]
ইমাম জাফর সাদিক আ: তার এই আটটি বিষয় শোনার পর বললেন : খোদার কসম তৌরত, ইঞ্জিল, যাবুর, ফুরকান এবং অন্যান্য সমস্ত আসমানী গ্রন্থ এই আটটি বিষয়ের উপর নাযিল হয়েছে।

১. ইরশাদুল কুলুব, ৫২ তম অধ্যায় ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.