প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে টার্গেট করে আজ (রোববার) বলেছেন, ‘ইনসানিয়াত-জমহুরিয়াত-কাশ্মিরিয়াত’ (গণতন্ত্র, মানবতা ও কাশ্মিরিয়াত) কোথায় গেল?

0 458

পিডিপি নেত্রী মেহবুবা আজ কাশ্মিরের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, যাত্রী, পর্যটক, শ্রমিক, ছাত্র ও ক্রিকেটারদের কাশ্মির ছেড়ে যেতে বলা হয়েছে। কিন্তু কাশ্মিরিদের পরিত্রাণ দেয়ার কোনও প্রচেষ্টা নেই।

আজই শ্রীনগরের একটি হোটেলে সেরাজ্যর আঞ্চলিক বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে সর্বদলীয় বৈঠক করার কথা ছিল। কিন্তু রাজ্য পুলিশ সমস্ত হোটেলে নির্দেশিকা জারি করে রাজনৈতিক বৈঠক বাতিল করতে বলেছে। অবশেষে আজ সন্ধ্যায় মেহবুবা মুফতির বাসায় ওই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

মেহবুবা বলেন, আমরা কেন্দ্রীয় সরকারকে এটা বলতে চাই যে, ৩৭০ ধারা ও ৩৫-এ ধারায় গরমিল করার চেষ্টা হলে তাঁর ফল মোটেই ভালো হবে না। আমরা কথা বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কোনও জবাব পাওয়া যাচ্ছে না। লোকেরা ভীত হয়ে রয়েছে। সরকার কথা বলতে চায় না। কেন্দ্রীয় সরকারকে এ ব্যাপারে সাফাই দেয়া উচিত।

মেহবুবা বলেন, আমরা সমস্ত আঞ্চলিক দল বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এজন্য আমরা হোটেলে বসতে চেয়েছিলাম। পুলিশ নির্দেশিকা জারি করে হোটেলে সভা স্থগিত করে দিয়েছে। আপনারা যা করতে চাচ্ছেন তা গোটা দেশের জন্য বিপজ্জনক হবে।

তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে যা করতে চায় তা করেছে। এবার তারা জম্মু-কাশ্মিরের মূলধারার নেতাদের এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে একই কৌশল অবলম্বন করছেন। যখন তারা জানতে পারে যে সমস্ত রাজনৈতিক দল বৈঠক করতে চলেছে, তখন ওরা দুর্নীতি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফারুক সাহেবকে চণ্ডীগড়ে নিয়ে যান। কেন্দ্রীয় সরকার দুর্নীতিকে অস্ত্র বানিয়ে রাজনৈতিক দল ও তাদের কর্মীদের হয়রানি করছে।

এদিকে, আজ (রোববার) কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ছাড়াও ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর প্রধান অরবিন্দ কুমার, রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং ‘র’-এর প্রধান সমন্ত গয়াল, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব গৌবাসহ নিরাপত্তা বিষয়ক প্রায় সব বিভাগের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কাশ্মির পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই বিশেষ বৈঠক বলে মনে করা হলেও ঠিক কী কারণে ওই বৈঠক সরকারিভাবে তা স্পষ্ট করা হয়নি।

নিরাপত্তাজনিত কারণে গত (শুক্রবার) পর্যটক ও অমরনাথ যাত্রার পুণ্যার্থীদের কাশ্মির ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়। সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত ৩৫ হাজার আধাসামরিক বাহিনীর জওয়ান। এসব ঘটনায় কাশ্মির জুড়ে নানা গুজব-বিভ্রান্তিসহ চাপা উত্তেজনা ছড়িয়েছে।

সেরাজ্যের বাসিন্দাদের জন্য বিশেষ সুবিধা সম্বলিত সংবিধানের ৩৭০ ধারা বা ৩৫-এ ধারা কেন্দ্রীয় সরকার বাতিল করে দিতে পারে বলে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। গভর্নর সত্য পাল মালিক ওই সম্ভাবনা নাকচ করে দিলেও এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট কোনো বার্তা না থাকায় উপত্যকার সাধারণ মানুষের মধ্যে সেই সন্দেহ এখনও দূর হয়নি। এমন জল্পনাও চলছে, আগামী ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শ্রীনগরের লালচকে গিয়ে পতাকা উত্তোলন করতে পারেন। সেজন্যই নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করার চেষ্টা। যদি তা হয় তাহলে প্রবল জাতীয়তাবাদের হাওয়ায় জম্মু-কাশ্মিরের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তা বিজেপি’র জন্য তুরুপের তাস হয়ে উঠতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

এদিকে, বিভিন্ন গুজবের মধ্যে সেখানকার চিকিৎসকদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। শ্রীনগর থেকে আকাশ পথে কমপক্ষে সাড়ে ৬ হাজার যাত্রীকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কাশ্মিরগামী ট্রেনের টিকিট বাতিল করলে বাড়তি জরিমানা দিতে হচ্ছে না। এপর্যন্ত প্রায় দশ হাজার পর্যটক, যাত্রী কাশ্মির ত্যাগ করেছেন।#

পার্সটুডে

Leave A Reply

Your email address will not be published.