কেন ইমাম হোসাইন (রা.) এর স্মরণ অবিনশ্বর হয়ে আছে ?

0 853

লেখকঃ জনাব আলী নেওয়াজ খান,

প্রভাশক, আল মোস্তফা ইন্টারনেশনাল বিশ্ববিদ্যালয়।

খোদায়ী রূপের অবিনশ্বরতা
ইমাম হোসেন (রা.)এর কারবালা বা আশুরার ঘটনার উপর আরো গভীর গবেষণামুলক কাজ হওয়ায়া উচিত । মিম্বারে মজলিশে বক্তব্য রাখার আগে তড়িঘড়ি করে কিছু গ্রন্থের তথ্যসূত্র মুখস্ত করে ঘটনা বায়ান করলে আশুরার যথার্থ হ্ক্ব আদায় করা হবে না। যাহোক আমরা এখানে অতি সংক্ষেপে ইমাম হোসেন (রা.) ও আশুরা ঘটার অমরত্বের বিষয়ে আলোচনা করবো। কেন আশুরার ঘটনা এখনো অমর হয়ে আছে বরং প্রতিনিয়তই আরো দ্বীপ্তমান হয়ে ঊঠছে ? অথচ পৃথিবীর অনেক মহাপ্রশিদ্ধ ঘটনাও মাটিচাপা পড়েগেছে ।
আহলে বায়েতর সকল সদস্য বিশেষ করে ইমাম হোসেনের ঘটনার পেক্ষাপটে এই নুরানী রেওয়াতটি বর্ণিত হয়েছে যে نَفَسُ الْمَهْمُومِ لَنَا الْمُغْتَمِّ لِظُلْمِنَا تَسْبِیحٌ وَ هَمُّهُ لِأَمْرِنَا عِبَادَةٌ [উসুল আল ক্বাফী , ইসলামী প্রকাশনা তেহরান, ২খন্ড, ২২৬ পৃষ্ঠা] আমাদের প্রতি যে অত্যাচার করা হয়েছে সেকথা স্মরণ করে যারা শোকাহত হবে বা শোকার্ত র্দীঘ শ্বাস-প্রশ্বাস নিবেন এগুলো সবই তাসবিহ সমতুল্য আর শোকপালন হলো ইবাদত । অতএব কেউ যদি শহীদদের সর্দার ইমাম হোসেন (রা.)এর শোকানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন ; তাহলে তার প্রত্যেকটি নি:শ্বাস বা তার শোকাহত ও ব্যাথিত অন্তর , যদিও দু:খভরাক্রান্ত হয়ে বসে আছেন,কিন্তু বিষয়টি ভিন্নরূপ লাভ করে ।

مَنْ تَذَكَّرَ مُصَابَنَا فَبَكَى وَ أَبْكَى- لَمْ تَبْكِ [যে ব্যক্তি আমাদের মসিবতকে স্মরণ করে কাঁদে এবং কাঁদায় ] এ বিষয়টি ভিন্নরূপ লাভ করে , তিনি শোকানুষ্ঠানে শোকাহত হয়ে বসে আছেন এটা তার ইবাদত نَفَسُ الْمَهْمُومِ لَنَا الْمُغْتَمِّ لِظُلْمِنَا تَسْبِیحٌ وَ هَمُّهُ لِأَمْرِنَا عِبَادَةٌ বিষয়টি সামান্য ব্যাপার নয় ! একসময় সম্মানীত বক্তা মজলিসে বক্তৃতা করছেন তিনি শোকের কাহিনী বর্ণনা করছেন বা কেউ শোকগাঁথা পড়ছেন সবাই কাঁদছেন সেখানে ঐ হাদিস [من بكاء] অনুযায়ী তারা সওয়াব প্রাপ্ত হবেন । কিন্তু এখানে এখনো ক্রোন্দন করেনি তিনি শোকানুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে ইমামের শাহাদত সংক্রান্ত ইতিহাসের বর্ণনা শুনছেন এবং শোকাহত হয়ে বসে আছেন; এটাই হল হল তার ইবাদত আর প্রতিটি নি:শ্বাসই তাসবিহ সমতুল্য । نَفَسُ الْمَهْمُومِ لَنَا الْمُغْتَمِّ لِظُلْمِنَا تَسْبِیحٌ وَ هَمُّهُ لِأَمْرِنَا عِبَادَةٌ এটা হল পবিত্র রমজান মাসের সমপরিমানের ওজনের জিনিস ! এখন একটু চিন্তা করে দেখুন মহানবী (স.)এর ঐ হাদীস إِنِّی تَارِكٌ فِیكُمُ الثَّقَلَینِ [আমি তোমাদের মাঝে দুটিভারী জিনিস রেখে যাচ্ছি.. ; ওয়সাইলুশ শীয়া, ১৭ তম খন্ড, ৩৪ পৃষ্ঠা] তাহলে দেখুন ঐভারী দুটি জিনিসের একটি (আহলে বাইত) কোন কোন বিষয়কে সামীল করে নিয়েছে !

রমজান মাস পবিত্র কোরআন নাযিল হওয়ার বরকতে ফজিলত প্রাপ্ত হয়েছে আর এজন্যেই এমাসের ফজিলতে বলা হয়েছে أَنْفَاسُكُمْ فِیهِ تَسْبِیحٌ (রোজাদার ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস তাসবিহ সমতুল্য) একজন রোজাদার ব্যক্তির প্রতিটি সাধারণ নি;শ্বাস এমনই রূপ লাভ করবে যেন তিনি বলছেন (سبحان الله সুবাহানাল্লাহ) এটা কি কম ফজিলত ! এখন এই ফজিলত যদি রাতকেও সামীল করে নেয়া হয় যখন তিনি রোজাও রাখছেন না বরং ঘুমিয়ে আছনে أَنْفَاسُكُمْ فِیهِ تَسْبِیحٌ وَ نَوْمُكُمْ فِیهِ عِبَادَةٌ (তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস তাসবিহ সমতুল্য আর ঘুম হল ইবাদত ; ইকবালু বিল আমালুল হাসানাহ্, নতুন সংস্করণ, প্রথম খন্ড, ২ নম্বর পৃষ্ঠা। ] অতএব রমজান মাসে একজন রোজাদার মানুষের সাধারণ নি:শ্বাস ইবাদত ও তাসবিহ সমতুল্য। সুতরা্ং মহানবীর (স.) সন্তানের শোকানুষ্ঠানে বসে শোকাহত হয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়াও ইবাদত نَفَسُ الْمَهْمُومِ لَنَا الْمُغْتَمِّ لِظُلْمِنَا تَسْبِیحٌ وَ هَمُّهُ لِأَمْرِنَا عِبَادَةٌ [[উসুল আল ক্বাফী , ইসলামী প্রকাশনা তেহরান, ২খন্ড, ২২৬ পৃষ্ঠা]]। পবিত্র রমজান মাসে কোরআন নাযিল হওয়ার বরকতে ঐজাতিয় ফজিলত(أَنْفَاسُكُمْ فِیهِ تَسْبِیحٌ) প্রাপ্ত হয়েছে । ইমাম হোসেনের (রা.) শোকানুষ্ঠানে (বিশেষ করে যদিও সকল ইমামগণই এমনই) উপস্থিত হওয়ার ঐ ফজিলত লাভ করেছে। এই মহত্ব কোত্থেকে লাভ করেছে ? তাদের সংখ্যা বাহাত্তরের উর্দ্ধে নয় ধরে নিন একশত জন ।

প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে কতজন মারা গেছেন যাদের সঠিক সংখ্যা অনেকেই জানেন না ! এঘটনা তো এক হাজার বা তিন/চারশত বছরের আগের ঘটনা নয় ! গত শতাব্দির ঘটনা ! সাত কোটির উপরে মানুষ মরে মাটি হয়ে গেল কিন্তু অনেকেই তাদের নামও জানে না সংখ্যাও মনে রাখেনি , সবই মাটি চাপা পড়েগেছে ।
অথচ তারা মাত্র বাহাত্তরজন এক হাজার বছর আগে শাহাদতের অমৃতসুধা পান করেছেন; কিন্তু সমগ্র বিশ্বকে তাঁরা তাঁদের স্মরণে সুঘ্রাণে সুবাসিত করে তুলেছেন ! আসলে বিষয়টি কি ?

আজকে আপনারা হয়ত লক্ষ্য করেছেন ইউরোপিয়ানরা আজ গনতন্ত্র রপতানী করেছে এর মুল কারণ হল তারা প্রতারণা ও মানুষ হত্যা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে । আজ হয়তো অনেকের হাতেই পরামনু বোমা রয়েছে যদি তৃত্বীয় বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে সমস্তপশ্চিমা বিশ্ব ছাই হয়ে যাবে । তারা ঐ ভয়ে গনতন্ত্রের ছায়াতলে আজ আশ্রয় নিতে চেষ্টা করছে। এটা কিভাবে সম্ভব সাত কোটি মানুষ মারা গেল তাদের কোন নাম-ঠিকানা নেই ইতিহাসের গ্রন্থে তারা দাফন হয়েগেছে । অথচ এখানে মাত্র বাহাত্তরজন শাহাদত বরণ করেছেন কিন্তু তাদের সম্মান ও মহত্ব কি মহান যে এখনো মানুষের অন্তরকে প্রকম্পিত করে তোলে ! এর মুল কারণ হল পবিত্র কোরআনের ঐ আয়াতটি যেখানে বলা হয়েছে ﴿كُلُّ شَی‏ءٍ هالِكٌ إِلاّ وَجْهَهُ﴾ [সুরা কাসাস ৮৮ নম্বর আয়াত]সব কিছুই বিলীন হয়ে যাবে একমাত্র আল্লাহর আনন বা রূপ ব্যতীত । পবিত্র কোরআনে আরো বলা হয়েছে كُلُّ مَنْ عَلَیها فانٍ ٭ وَ یبْقی وَجْهُ رَبِّكَ﴾[ [সুরা আর রহমান ২৬-২৭ নম্বর আয়ত]যাকিছু আছে সবই ধ্বংস হয়ে যাবে একমাত্র আল্লাহর আনন অবশিষ্ট থাকবে । আহলে বাইত চির অবিনশ্বর হয়ে থাকার মুল কারণ হলো তাঁরা হলেন মহান আল্লাহর আনন বা অজিউল্লাহ তাই অবশিষ্ট থাকবে কেউ চাইলেও মুছতে পারবে না। আহলে বাইত হলেন মহান প্রতিপালকের সেই অজিউল্লাহ তাই অমর হয়ে থাকবে তাঁদের স্মরণ ও জিকির ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.