আজাদ কাশ্মীরের নীলম উপত্যকায় চারটি সন্ত্রাসী আস্তানা গুঁড়িয়ে দেয়ার দাবি করেছে ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত। তবে চিরবৈরী প্রতিবেশীর এমন দাবি প্রত্যখ্যান করেছে পাকিস্তান।
ভারতের সেনাপ্রধানকে এমন দাবি প্রমাণ করতে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর।
রোববার সকালে চারটি সন্ত্রাসী আস্তানা গুঁড়িয়ে দেয়ার দাবি করে। পাশাপাশি পাকিস্তানি ৬ সেনাসহ২০ নাগরিককে হত্যারদাবি করে ভারত।
তবে পাকিস্তানের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক ডনের প্রতিবেদনের বলা হয়, ভারতের হামলায় পাকিস্তানের এক সেনাসহ ছয় বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আরও নয় বেসামরিক লোক আহত হয়েছে।
তবে ভারতের দাবি প্রত্যাখ্যান করেন পাকিস্তানের আইএসপিআরের মুখপাত্র জেনারেল আসিফ গফুর। তিনি এর সত্যতা প্রমাণ করতে ভারতীয় সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াতকে চ্যালেঞ্জ দেন।
তিনি চারটি সন্ত্রাসী আস্তানা গুঁড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রোববারের ঘটনায় এক পাকিস্তানি সেনা ও ছয় বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। কোনো উসকানি ছাড়া ভারতীয় সেনাবাহিনী এ হামলা চালায়।
আসিফ গফুর বলেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ভারতে হামলা চালিয়ে দুটি বাংকার ধ্বংস করে। পাকিস্তানের হামলায় ভারতীয় ৯ সেনা নিহত হয়েছে। এছাড়া এ হামলায় বেশ কয়েকজন সেনাবাহিনী আহত হয়েছে।
এদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ড. মোহাম্মদ ফয়সাল টুইট বার্তায় বলেন, ভারতীয় সেনাপ্রধান শুধু দাবি করার জন্যই এমন দাবি করছে।
চারটি সন্ত্রাসী আস্তানা গুঁড়িয়ে দেয়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছে পাকিস্তানে থাকা বিদেশি কূটনৈতিকরা। তারা সেখানে এমন কোনো আলামত পাননি বলে জানিয়েছে সামরিক বাহিনী।
মঙ্গলবার টুইট বার্তায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ড. মোহাম্মদ ফয়সাল আরও বলেন, রোববার সকালে আজাদ-কাশ্মীরের নীলম উপত্যকায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর হামলায় চারটি সন্ত্রাসী আস্তানা গুঁড়িয়ে দেয়ার দাবি করা ঘটনাস্থল বিদেশি কূটনৈতিকদের একটি দল প্রথম সাক্ষী হিসেবে পরিদর্শনে গিয়েছে।
কূটনৈকিতকদের সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ রেখার (লক) কাছে নওসারি, শাহকোট এবং জুরা সেক্টরে নেয়া হয়। নওসাদা গ্রামে ভারতীয় সেনাবাহিনীর আক্রমণে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিপিন রাওয়াতের দাবির কারণে বিদেশি কূটনৈতিকদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের আয়োজন করা হয় বলে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে।
ওই এলাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে ও কূটনৈতিকদের নিয়ে আইএসপিআরের মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর বিবৃতি দেন। তিনি বলেন, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর আর্টিলারি শেলের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন কূটনৈতিকরা।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালে ভারত ৩ হাজার ৩৮ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে এবং ৫৮ জন বেসামরিক লোককে হত্যা করেছে। এছাড়া ৩১৯ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। ২০১৯ সালে দুই হাজার ৬শ আটবার ভারত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। এতে ৪৪ বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে এবং ২৩০ জন আহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মধ্যে পার্থক্য হল, পাকিস্তান শুধু ভারতীয় পোস্টগুলো টার্গেট করে।
তিনি বলেন, বিদেশি কূটনৈতিকরা জুরা বাজারের দোকান মালিক ও স্থানীয় জনগণের সঙ্গে কথা বলেছেন। ভারতের হামলায় দোকান ও বাসাবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, সব নির্দোষ লোকজন ভারতের হামলার টার্গেট।
ড. ফয়সাল বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় হাইকমিশনের কোনো প্রতিনিধি দল আজকের সফরে যোগদান করেননি।
জেনারেল গফুর বলেন, কোনো বিদেশি কূটনৈতিক/মিডিয়া হামলার সত্যতা প্রমাণ করতে পারেনি। তিনি ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতি না থাকা নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, হাইকমিশন কি ভালো? কেনো সেনাবাহিনীর প্রধানের পাশে কেউ দাঁড়ায়নি?
পাক আইএসপিআর প্রধান বলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী মিথ্যা দাবির পক্ষে ভারত কোনো হেতু উপস্থাপন করতে পারেনি।
সূত্র: ডন, যুগান্তর।