যুদ্ধ হলে ইরানকে ৮ ঘন্টায় ধ্বংস করে দিবে সৌদি আরব: প্রিন্স; বাগাড়ম্ভর বললেন বিশেষজ্ঞরা!

0 843

“ইরানের সামরিক শক্তির চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে সৌদি আরব। যুদ্ধ শুরু হলে আট ঘণ্টার মধ্যে ইরানকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম রিয়াদ।”

প্রিন্স আব্দুল্লাহ বিন সুলতান বিন নাসের আস-সাউদ এমনটাই দাবি করেছেন। আরবি ভাষায় লেখা এক টুইটার পোস্টে সৌদি প্রিন্স এ দাবি করেন।

সৌদি আরবের চ্যানেল-২৪-এ ২০১৬ সালে একটি ভিডিও সম্প্রচারিত হয়। ওই ভিডিওর বরাত দিয়ে ওই কথা বলেছেন সৌদি প্রিন্স আব্দুল্লাহ বিন সুলতান বিন নাসের।

ওই ভিডিওতে সৌদি আরবের এফ-১৫ জঙ্গিবিমান এবং ইরানের এফ-৪ ফ্যান্টম জঙ্গিবিমানের তুলনা করে সৌদি আরবের একজন বিশ্লেষক বলেছিলেন, ইরানের অস্ত্র ও সামরিক যন্ত্রপাতি অনেক পুরনো। সে তুলনায় সৌদি আরবের অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম অনেক আধুনিক।

সৌদি প্রিন্স আব্দুল্লাহ বিন সুলতান বলেন,’ইতিমধ্যে আরো দু’বছর চলে গেছে। এই সময়ের মধ্যে সৌদি আরব বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনেছে। নৌ শক্তি, স্থল ও বিমানবাহিনীকে অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করেছে সৌদি আরব।

সৌদি প্রিন্স বলেন,’যা গোপন আছে তা হচ্ছে অনেক বড় কিছু। বিশ্বে এমন কোনো বাহিনী নেই যারা আমাদের ঐক্যের ধারে কাছে দাঁড়াতে পারে। আমাদের দৃঢ়তা আমাদের সতর্কতার জন্য আল্লাহকে ধন্যবাদ।’

কিন্তু সমরাস্ত্র বিশেষজ্ঞদের মতে সৌদি আধুনিক অস্ত্রে ইরানের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও সামরিক কৌশলে ইরানের চেয়ে সৌদি বহু পিছিয়ে। তাছাড়া ইরান যেভাবে দ্রুততম সময়ে নিজেদের সামরিক শক্তি ও প্রযুক্তি বাড়িয়ে চলেছে তা বিশ্বের ক্ষমতাধর শক্তিকে ভাবিয়ে তুলেছে। যার দরুন স্বয়ং আমেরিকাও ইরানে হামলা করার সিদ্ধান্ত থেকে শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।

মার্কিন সেনাপ্রধান জেনারেল জোসেফ ডানফোর্ড ইরানের সামরিক সক্ষমতার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, ‘ক্ষেপণাস্ত্র ও সাইবার জগতে নিজের সক্ষমতার যথেষ্ট উন্নতি ঘটিয়েছে ইরান।’ তিনি শুক্রবার আমেরিকার কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্সে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন।

মার্কিন সামরিক বাহিনীর জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান ডানফোর্ড ইরানের হাতে অত্যাধুনিক মার্কিন ড্রোন বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন,’ইরানিরা যে সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে যথেষ্ট শক্তিশালী হয়েছে তা এ ঘটনায় প্রমাণিত হয়। জেনারেল ডানফোর্ড দাবি করেন, ইরানের পক্ষ থেকে মার্কিন ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করার খবরে তিনি বিস্মিত হননি কারণ, দেশটির সামরিক শক্তি সম্পর্কে তার আগে থেকে ধারণা ছিল।

মার্কিন সেনাপ্রধান জেনারেল যোসেফ ডানফোর্ড

এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা ইরান নিয়ন্ত্রিত প্রতিরোধ সংগঠনগুলোও ইরানের বড় শক্তি। ইতোমধ্যে এসব প্রতিরোধ সংগঠনগুলো তাদের শক্তি-সামর্থের প্রকাশ করেছে। লেবাননের হিজবুল্লাহ, ফিলিস্তিনের হামাস ও ইসলামি জিহাদ, ইরাকি হিজবুল্লাহ ও হাশদ্ আশ্ শাবাব, সিরিয়ায় লস্করে জয়নাব, ইয়েমেনে হুথি ইত্যাদি।

লেবাননের হিজবুল্লাহর মহাসচিব হাসান নাসরুল্লাহ্ ইতিমধ্যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন,’ইরানে হামলা হলে তা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়বে।’

হিজবুল্লাহর মহাসচিব সৈয়দ হাসান নাসরুল্লাহ।

প্রসঙ্গত, সৌদি আরব ২০১৫ সালে প্রতিবেশী দেশ ইয়েমেনের ওপর সামরিক আগ্রাসন চালায়। এরপর চার বছর পার হয়ে গেলেও সে যুদ্ধে বিজয় লাভ করা তো দূরের কথা যে সমস্ত লক্ষ্য নিয়ে যুদ্ধ শুরু করেছিল তার একটিও অর্জন করতে পারেনি সৌদি সরকার। এদিকে, নিউ ইয়র্ক টাইমস গত জুলাই মাসে এক প্রতিবেদনে বলেছে, ‘ইয়েমেনে আটকে গেছে সৌদি আরব।’ ইয়েমেন নিয়ে যখন সৌদি আরবের এই পরাজয়বরণ অবস্থা তখন ইরান নিয়ে সৌদি প্রিন্স আব্দুল্লাহ বিন সুলতানের বক্তব্যকে নিতান্তই বাগাড়ম্বর বলে মনে করা হচ্ছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.