কাশ্মীরি নারীদের তল্লাশির নামে যৌন হয়রানি করছে ভারতীয় বাহিনী: ইন্ডিয়া টাইমসের রিপোর্ট

0 748

নয়াদিল্লিভিত্তিক কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থার অভিযোগ, বাড়ি বাড়ি তল্লাশির নামে বহু নারী ও অল্প বয়সী কিশোরীকে যৌন হয়রানি এবং শতশত কিশোরকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার নিউ ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ও হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

পুলিশের কড়া নজরদারির মধ্য দিয়ে কাশ্মীরি নারীদের দৈনন্দিন চলাচল!

স্বায়ত্তশাসন বাতিলের একদিন পর (৬ আগস্ট) ছররা গুলিতে গুরুতর আহত হন ১৬ বছর বয়সী কিশোর আসরার আহমেদ। বাড়ির বাইরে বের হলে সেনারা তাকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে।

এতে তার মাথা, চোখ, কাঁধ ও মুখে মারাক্তক ক্ষতের সৃষ্টি হয়। ১৫ দিন ধরে শ্রীনগরের শের-ই-কাশ্মীর ইন্সটিটিউট অব মেডিকেল সাইন্সেস (এসকেআইএমএস) হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।

হাসপাতালে বিছানায় শুয়ে ছররা গুলি খাওয়ার অভিজ্ঞতা জানিয়ে আহমেদ বলেন, ‘একটা বল আনতে বাড়ির প্রধান ফটকের বাইরে বের হই আমি। ঠিক তখনই কিছু দূরে দাঁড়ানো সেনারা প্রথমে আমার দিকে টিয়ার গ্যাস ছুড়ে মারে। পরপরই আমার চোখে ও মুখে ছররা গুলি ফায়ার করে।’

ছররা গুলিতে আহতদের চিকিৎসার জন্য শ্রীনগরের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল শ্রী মহারাজা হরি সিং হাসপাতালে (এসএমএইচএস) চক্ষু বিভাগ খোলা হয়েছে।

প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে এখানে। এখন অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। শ্রীনগর পুরনো শহরের বাসিন্দা সামির হোসেন তাদেরই একজন। একটি ওষুধের দোকান চালান হোসেন। তিনি জানান, গত শনিবার ছররা গুলি লাগে তার চেখে।

ওই সময় নিজের ওষুধের দোকান থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। সেদিনের অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বাম চোখে এসে লাগে গুলি। দোকান থেকে ফেরার পথে পুলিশ গুলি চালায়। আমি ঠিক জানি না, তারা কেন আমার দিকে তাক করল।’

সামির হোসেনের বিছানার পাশেই যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন ৭৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ সাদিক। তার চোখেও ছররা গু’লি লেগেছে। সাদিক বলছিলেন, ‘মাগরিবের নামাজ পড়ে ঘরে ফিরছিলাম আমি।

ওই সময় মসজিদের কাছেই কিছু মানুষ বিক্ষোভ করছিল। তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে পুলিশ। আমি বিক্ষোভে অংশ নিইনি। কিন্তু আমাকেও গু’লি করা হয়েছে।’

হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে ছররা গুলির রোগীর ভিড় থাকলেও এ পর্যন্ত ঠিক কতজন চিকিৎসা নিয়েছেন, সে ব্যাপারে একেবারে নীরব রয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ইতিপূর্বে হাসপাতালের স্টাফরাও ছররা গুলির রোগীর ব্যাপারে সহজেই তথ্য দিতেন।

কিন্তু এখন একেবারেই চুপ। রোগীদের দর্শনার্থীদের ওপর কড়া নজর রাখছে পুলিশ। রাতে দায়িত্ব পালন করা চক্ষু বিভাগের এক ডাক্তারের সঙ্গে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ওয়ার্ডে বর্তমানে ঠিক কতজন রোগী ভর্তি আছেন তা তিনি জানেন না।

সিনিয়র ডাক্তারদের থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। এ নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার এখতিয়ার নেই আমাদের।’ বিক্ষোভ রুখতে ২০১০ সাল থেকে পেলেট গান (এক ধরনের অ’স্ত্র) ব্যবহার করছে বাহিনী।

ভারতে শুধু কাশ্মীরেই এই পেলেট গান ব্যবহার করা হচ্ছে। বন্দুকের গুলির মতো মরণাস্ত্র নয় এ ছররা। একেকটি শেলের মধ্যে ছোট ছোট পাঁচ শতাধিক লোহার বল থাকে। বন্দুক থেকে এই শেল ছোড়া হলে বাইরের খোলস ফেটে বলগুলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

কাশ্মীর সরকারের এক তথ্যানুসারে, ২০১৭ সালে আট শতাধিক কাশ্মীরি চোখে আ’হত হন। তবে পিলেট ভি’কটিম ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের মতে, ২০১৭ সালে ১২০০-এর বেশি নারী, পুরুষ ও শিশুর চোখে ছররার গু’লি লাগে।

এর মধ্যে শতাধিক কাশ্মীরির এক বা উভয় চোখ অন্ধ হয়ে যায়। ২০১৬ সালকে তো ‘গণ-অন্ধত্ব বছর’ বলা হয়ে থাকে। ওই বছরের ৮ জুলাই বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা বুরহান ওয়ানির হ’ত্যার পর উত্তপ্ত কাশ্মীরে ১১০০ জনের চোখে ছররা গুলি ঢুকে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.