হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা মামলায় ৭ আসামির ফাঁসির আদেশ

0 639

বাংলাদেশের রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান ক্যাফেতে বহুল আলোচিত জঙ্গি হামলা মামলার রায়ে সাতজনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। আজ (বুধবার) ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা ও বড় মিজান নামে অভিযুক্ত একজনকে খালাসের আদেশও দিয়েছে আদালত।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজিব গান্ধি, মাহমুদুল হাসান মিজান, সোহেল মাহফুজ, রাশিদুল ইসলাম ওরফে রায়াশ, হাদিছুর রহমান সাগর, মামুনুর রশিদ রিপন ও শরিফুল ইসলাম খালেদ।

রায় শুনে আসামিদের কারও চেহারাতেই অনুশোচনার কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি। তারা উচ্চস্বরে বলতে থাকেন, “আল্লাহু আকবর, আমরা কোনো অন্যায় করিনি।”

অপরাধে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলায় বিচারের মুখোমুখি করা আরেক আসামি মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে খালাস দেওয়া হয়েছে রায়ে। তাকে রায় শুনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়।

হলি আর্টিজান

আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হলি আর্টিজানে হামলা: আদাল

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক মজিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে তথাকথিত জিহাদ কায়েমের লক্ষ্যে জননিরাপত্তা বিপন্ন করার জন্য জনমনে আতঙ্ক তৈরি ও আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য তামিম চৌধুরীর পরিকল্পনায় নব্য জেএমবি সদস্যরা গুলশানে হলি আর্টিজানে হামলা চালায়। তারা নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে গ্রেনেড, আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো চাপাতি দিয়ে ১৭ জন বিদেশি ও ৪ জন বাংলাদেশি নাগরিক এবং দুই জন পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করে। অনেককে গুরুতর আহত ও জিম্মি করে।

হলি আর্টিজান হামলার মূল পরিকল্পনা ও সমন্বয়কারী হিসেবে তামিম চৌধুরীর নাম উঠে এসেছে আদালতের পর্যবেক্ষণে। আদালত বলেন, আসামি আসলাম হোসেন র‌্যাশ তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করে, ‘আমি তখন তামিম ভাইয়ের কাছে গুলশান বা কোনো কূটনৈতিক এলাকায় আক্রমণের উদ্দেশ্য জানতে চাই। তামিম ভাই বলে যে আমাদের সংগঠন নব্য জেএমবি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস দ্বারা অনুপ্রাণিত। আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই গুলশান কূটনৈতিক এলাকায় হামলা করা প্রয়োজন।’ আদালত বলেন, এ থেকে প্রতিষ্ঠিত হয় যে তামিম চৌধুরীর নেতৃত্বেই হলি আর্টিজানে হামলা সংঘটিত হয়।

বিচারিক আদালতের রায়ে সরকার সন্তুষ্ট: আইনমন্ত্রী

হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে সরকার সন্তুষ্ট বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। বাংলাদেশে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটলে যে দ্রুত তার বিচার করা হয়, সেটিও এই রায়ের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে প্রমাণ করা গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে বলতে চাই, আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট। এই রায়ের মাধ্যমে আমরা সারাবিশ্বের কাছে প্রমাণ করতে পেরেছি, বাংলাদেশে এরকম হত্যাকাণ্ড ঘটলে অত্যন্ত দ্রুত তার বিচার হয়। সঠিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সঠিক বিচার করা হয়।

রায় অনুকরণীয় হয়ে থাকবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী 

রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা মামলার বিচারের রায় অনুকরণীয় হয়ে থাকবে বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।

হলি আর্টিজান হামলা মামলার রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমকে এ কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, ‘এই রায় সন্ত্রাস প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে। গুলশানে হামলার ঘটনায় আমরা সন্ত্রাসীদের বিচারের মুখোমুখি করেছি। ইউরোপ-আমেরিকায় এমন ঘটনায় সবাইকে মেরে ফেলা হয়। তবে আমরা কিছু মেরেছি, আর বাকিদের বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি।’

চাঞ্চল্যকর এ মামলায় পুলিশ আট অভিযুক্ত জঙ্গির বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই অভিযোগপত্র জমা দেয়। একই বছরের ২৬ নভেম্বর অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল।

গত বছরের ৩ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী রিপন কুমার দাসের ট্রাইব্যুনালের সামনে জবানবন্দি দেয়ার মাধ্যমে এ চাঞ্চল্যকর মামলার আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হয়। ২০১৬ সালের ১ জুলাই ওই ক্যাফেতে সশস্ত্র জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২২ জনকে হত্যা করে। তাদের মধ্যে ইতালির নয়, জাপানের সাত, ভারতের এক, বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত আমেরিকান এক, বাংলাদেশি দুজন নাগরিক এবং দুজন পুলিশ সদস্যও নিহত হন। হামলার পর জিম্মি অবস্থার অবসানে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে নিহত হয়েছিলেন পাঁচ জঙ্গি। তারা হলেন- মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ ওরফে মামুন, নিবরাস ইসলাম, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জল।

এছাড়া বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের সময় নিহত হয়েছেন নব্য জেএমবির আরও ৮ সদস্য। তাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল হাসনাত রেজা করিমও অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান।

হলি আর্টিজানে হামলায় সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় আসামি মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে খালাস দেয়া হয়েছে

ওই ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন ওই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রিপন কুমার দাস। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির মামলাটি তদন্ত করে ২০১৮ সালের ১ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। একই বছরের ২৬ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান।

এক বছরের বিচারকালে মামলার মোট ২১১ জন সাক্ষীর ১১৩ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। এরপর আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন এবং রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে গত ১৭ নভেম্বর এ মামলার বিচারকাজ শেষ হয়। ওইদিনই আদালত রায় ঘোষণার জন্য ২৭ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।#

পার্সটুডে

Leave A Reply

Your email address will not be published.