জীবনশৈলী : মনের নিয়ন্ত্রণ ও দৃষ্টিভঙ্গীতে পরিবর্তন আনা

0 594

প্রিয় বন্ধুরা, সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। আশাকরি সবাই ভালো আছেন। পৃথিবীতে সবাই ভালোভাবে বাঁচতে চায়, সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে চায়। কিন্তু ক’জনের এই চাওয়া পূরণ হয়? সুন্দরভাবে জীবনযাপনের আশা অপূর্ণ থাকার নানা কারণ রয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে অজ্ঞতা।

সুন্দরভাবে জীবনযাপনের উপায় জানা থাকলে অনেক সমস্যাকেই আর জটিল মনে হয় না। বড় সমস্যা কাটিয়েও সুখ অনুভব করা যায়। যাইহোক আমরা সুন্দরভাবে জীবনযাপনের উপায় নিয়েই কথা বলার চেষ্টা করব আমাদের নতুন ধারাবাহিক জীবনশৈলীতে। আশাকরি প্রতিটি আসরেই আপনাদের সঙ্গ পাব। জীবনশৈলীর নতুন এই ধারাবাহিক আমাদের জীবন ব্যবস্থায় নতুন আমেজ যোগ করবে-এ প্রত্যাশা রইলো।

মানবজীবনে যেমন সুখ আছে তেমনি আছে দুঃখও, সফলতার পাশাপাশি আছে ব্যর্থতাও। নানা চড়াই-উৎড়াইয়ের মধ্যদিয়েই মানুষের জীবন বয়ে চলে। কখনো কখনো জীবনকে অত্যন্ত কঠিন মনে হয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে দুঃখ-কষ্ট চীরস্থায়ী নয়। একইভাবে চীরস্থায়ী নয় সুখ ও আনন্দও। কাজেই দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হলেই হতাশ ও অস্থির হয়ে পড়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। অভিজ্ঞতার আলোকে ইচ্ছাশক্তি ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে মানুষ চাইলে

নিজের ব্যর্থতাকে সফলতা ও কান্নাকে হাসিতে পরিণত করতে পারে। তবে এজন্য সুন্দরভাবে জীবনযাপনের পন্থা জানতে হবে যাতে প্রতি মুহূর্তেই আমরা নিজেদেরকে সৌভাগ্যবান ভাবতে পারি। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে আনন্দময় করে গড়ে তুলতে মানুষ নিজেই ভূমিকা পালন করতে পারে। জীবনকে সুন্দর হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব মানুষের নিজের হাতে।

সুখী হতে আমরা সব সময় চেষ্টা চালাই। আমরা চেষ্টা করি একটি একক নিয়ম বের করার। আসলে এমন একক কোনো সূত্র নেই যা নিশ্চিতভাবে সুখ হাতের নাগালে এনে দিতে পারে। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী, আকর্ষণ, রূচি, পছন্দ যেহেতু ভিন্ন ভিন্ন সেকারণে সবার জন্য একই সূত্র বা পদ্ধতি বাতলে দেওয়া সম্ভব নয়। মানুষে মানুষে এই যে পার্থক্য তা প্রাকৃতিক। আর এ কারণেই সবাইকে নিজের মতো করে সর্বোত্তম জীবনযাপনের পন্থা খুজেঁ নিতে হয়। তবে সুখী জীবনের জন্য কিছু সাধারণ সূত্র বা পন্থাও রয়েছে। ধর্মীয় ব্যীক্তত্ব, চিন্তাবিদ ও মনোবিজ্ঞানীরা এসব সূত্র বাতলে দিয়েছেন। তাদের বক্তব্য মানুষের জীবন চলার পথকে মসৃনতর করে। তাদের মতে, সুন্দর জীবনযাপনে প্রথমেই ভূমিকা রাখে আমাদের মন। মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে সেখানে একটু সংস্কার আনলেই আমাদের জীবন সম্পর্কে ধারণা পাল্টে যেতে পারে। এই সংস্কারের মাধ্যমে দৃষ্টিভঙ্গীতে পরিবর্তন আসবে। আর দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তনই গোটা জীবন সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধিতে পরিবর্তন আনতে পারে।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মানুষের মন অত্যন্ত শক্তিশালী। কাজের সূচনা হয় মন থেকে। কাজ হলো মানুষের ইচ্ছার বহির্প্রকাশ। আর এই সূচনা তথা ইচ্ছাটা আসে মন থেকেই। এই ইচ্ছাটা যদি ভালো হয় কাজও হয় ভালো, আর ইচ্ছা তথা ভাবনা যদি খারাপ হয় কাজও হয় খারাপ। মানুষ যদি তার মনকে মন্দ চিন্তার সুযোগ দেয় তাহলে তার কাজগুলোও হবে খারাপ। আমরা যদি মন্দ কাজ থেকে বাঁচতে চাই তাহলে আমাদের মনকে ভালো কাজ বা ভালো চিন্তার সুযোগ দিতে হবে। মনকে ভালো কাজ দিয়ে ব্যস্ত রাখতে হবে। মানুষের মনই হচ্ছে তার নিজের জন্য ঘটে যাওয়া সব কিছুর নিয়ন্ত্রক ও নির্ধারক। তবে মনের ভেতরে পরিবর্তন ও সংশোধনের ক্ষমতা মানুষের রয়েছে।

মানুষ নানা ভুল-ত্রুটির পর অনেক নতুন কিছু শেখে এবং পরবর্তীতে সঠিক পথ বাছাই করতে সক্ষম হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একজন মানুষ এটা বোঝার ক্ষমতা রাখে যে সে যদি অনেক বছর আগে নির্দিষ্ট একটা সিদ্ধান্ত না নিতো তাহলে তার জীবনটা এমন হতো না। জীবনটা অন্যরকম হতো। কিন্তু একটা ভুল সিদ্ধান্তের কারণে জীবনটা অন্যরকম হয়ে গেছে। এই অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি থেকে মানুষ তার মনে পরিবর্তন আনতে পারে। তবে কোনো কোনো মানুষ চিন্তা ও পরিকল্পনায় বিশ্বাস করে না। তারা মনে করে, যা ঘটবে সেটাই কল্যাণকর। তারা উত্তম জীবন চায় না। তারা বাতাসে ভাসমান পাতার মতো নিজেদেরকে ছেড়ে দেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, নিজের বিবেক-বুদ্ধি ও চিন্তা শক্তিকে ব্যবহার না করা হলে মানুষ নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।

হজরত মোহাম্মাদ (স.) চেষ্টা করেছেন মুসলমানরা যাতে চিন্তা শক্তি ও বিবেক-বুদ্ধিকে কাজে লাগায়। বিবেক-বুদ্ধি ও চিন্তা শক্তি কাজে লাগাতে তিনি সব সময় পরামর্শ দিয়ে গেছেন যাতে মানুষ আরও সুন্দর জীবনের অধিকারী হতে পারে। মানুষের চিন্তা তার আত্মাকে পরিপূর্ণতা দেয়। চিন্তাশক্তি মানুষকে ভুল-ত্রুটি থেকে দূরে রাখে এবং মানুষের মনের শক্তিকে জোরদার করে। চিন্তা ও বিচার-বিবেচনা মানুষকে অস্তিত্ব জগতের শেকড় বুঝতে সহযোগিতা করে। যখন কেউ ভালো কিছু নিয়ে চিন্তা করা অব্যাহত রাখে সেই ব্যক্তি ক্রমেই ভালোর দিকে আকৃষ্ট হতে থাকে। তার আচরণও সুন্দর ও উপযুক্ত হয়ে উঠে। আহলে বাইতের সদস্যদের কথা ও কাজে এসব বাস্তবতা উঠে এসেছে।

ইমাম সাদেক (আ.)বলেছেন,মানুষের চিন্তাশক্তি তাকে ভালোর দিকে ধাবিত করে। প্রত্যেকেই তার চিন্তা ও বিবেক-বিবেচনার মাধ্যমে তার নিজের মধ্যে সুপ্ত শক্তি ও ক্ষমতাকে জাগিয়ে তুলতে পারে। আর তা সুন্দর জীবনযাপনে সহযোগিতা করে।

মানুষকে তার মনের ওপর নিয়ন্ত্রণের অনুশীলন করতে হবে। কারণ রক্ত-মাংসের বিশাল দেহের মানুষটি নিয়ন্ত্রিত হয় অদৃশ্য সেই মনের দ্বারা। কাজেই মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ মানেই নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ। নিজের মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকলে শয়তানি শক্তির ধোঁকায় পড়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে যে বিবেক ও চিন্তাশক্তি দিয়েছেন তা দিয়ে মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। মনে রাখতে হবে, মানুষ শ্রেষ্ঠ, কারণ তাকে বিবেক দেওয়া হয়েছে। এই বিবেকের কারণে মানুষ পশুর থেকে আলাদা।

বন্ধুরা, আজকের আসরে আমরা সুন্দরভাবে জীবনযাপনের জন্য মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং দৃষ্টিভঙ্গীতে পরিবর্তন আনার কথা বললাম। আগামী আসরে এ বিষয়ে আরও আলোচনা করব।#

পার্সটুডে

Leave A Reply

Your email address will not be published.