ইরাকে অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ায় আমেরিকা ও ইসরাইল এতো খুশী কেন?

0 314

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এবং দখলদার ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইরাকে চলমান গোলযোগ ও অস্থির পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে এ অবস্থা অব্যাহত রাখার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।

ইরাকে ১ অক্টোবর থেকে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। কয়েক দিন পর বিক্ষোভ স্থগিত রেখে ফের ২৫ অক্টোবর থেকে বিক্ষোভ শুরু করা হয়। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শেষ পর্যন্ত সহিংসতায় রূপ নেয় এবং হতাহতের ঘটনা ঘটে। বেকারত্ব, দরিদ্রতা, দুর্নীতি ও নাগরিক সুযোগ সুবিধা না থাকার প্রতিবাদে ইরাকে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ চলে আসছে। সরকার জনগণের বিক্ষোভ কর্মসূচির বিরোধিতা করেনি কিন্তু শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়া থেকে বোঝা যায় এটি পরিকল্পিত এবং এর পেছনে সরকার বিরোধীদের হাত রয়েছে যার উদ্দেশ্য সরকারকে বেকায়দায় ফেলা।

ইরাকের বর্তমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে আমেরিকা ও ইসরাইল খুবই খুশী এবং তাদেরই সমর্থক ও অনুচররা ইরাকের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচিকে সহিংসতায় পরিণত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইটারে দুটি ভিডিও বার্তায় কারবালায় ইরানের কন্স্যুলেটে হামলার ভিডিও তুলে ধরেছেন যা এর আগে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছিল। এদিকে, দখলদার ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াসরাইল কাটজ ইরাকে সরকার বিরোধী সহিংস বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন জানিয়ে চলমান সহিংসতার জন্য ইরানকে দায়ী করেছেন।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আমেরিকা ও ইসরাইলের এসব বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড থেকে কয়েকটি বিষয় ফুটে ওঠে। প্রথমত, ইরাকে চলমান সহিংসতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির পেছনে আমেরিকা ও ইসরাইলের হাত রয়েছে। এ ব্যাপারে ইরাকের আসহাবে আল হক দলের মহাসচিব কেইস আল  খায আলী বলেছেন, “ইরাকে গোলযোগ সৃষ্টিতে আমেরিকার চাইতে ইসরাইল সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। ইরাকের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি প্রদেশে ইসরাইলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের উপস্থিতি রয়েছে। এমনকি রাজধানী বাগদাদের বিমানবন্দরে মোসাদ ও সিআইএ’র যৌথ ঘাঁটি রয়েছে।” তিনি বলেন, “মোসাদ ইরাকের বিভ্রান্ত কয়েকটি গ্রুপকে সঙ্গে নিয়ে সেদেশে সরকার বিরোধী অন্দোলন জিইয়ে রাখার চেষ্টা করছে।”

দ্বিতীয়ত, ওয়াশিংটন ও তেলআবিব ইরাকের শিয়া সম্প্রদায়ের কিছু বিভ্রান্ত গোষ্ঠী এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দামের বাথ পার্টির সদস্যদের সহযোগিতায় ইরাকে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তারাই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবিকে রাজনৈতিক সহিংসতার দিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করছে।

তৃতীয়ত, আমেরিকা ও ইসরাইল প্রচার মাধ্যম ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে ইরাকের জনগণের সরকারবিরোধী বিক্ষোভকে ইরানের দিকে ধাবিত করার চেষ্টা করছে। অর্থাৎ তাদেরকে ইরানের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। কারণ ইরাক ও ইরানের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতাকে কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না আমেরিকা ও ইসরাইল। বিশেষ করে ইরাকে ইরানের প্রভাব বিস্তারে খুবই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে তেলআবিব ও ওয়াশিংটন। ইসরাইল, আমেরিকা ও তাদের কয়েকটি আরব মিত্র দেশ ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টি ও দেশটির অভ্যন্তরে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিতে ব্যর্থ হওয়ার পর এখন ইরানের প্রতিবেশী দেশগুলোতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।

চতুর্থ বিষয়টি হচ্ছে, ইরাকের জনগণের মধ্যে আমেরিকার কোনা স্থান নেই। আমেরিকা ও ইসরাইলের পতাকায় অগ্নি সংযোগ করা থেকে বোঝা যায় ইরাকের জনগণ বিদেশিদের হস্তক্ষেপের বিরোধী।#

পার্সটুডে

Leave A Reply

Your email address will not be published.