হযরত আলী (আ) দৃষ্টিতে জ্ঞান এবং সম্পদের মধ্যে কোনটি উত্তম ?

0 951

জ্ঞান ও সম্পদের মধ্যে কোনটি উত্তম 

অনেক লোক হযরত আলীকে (আঃ) ঘিরে মসজিদে বসেছিল। একজন ভদ্রলোক মসজিদে প্রবেশ করলো এবং সুযোগ বুঝে প্রশ্ন করলো:

হে আলী ! আমার একটি প্রশ্ন আছে। আর তা হচ্ছে এই যে, জ্ঞান ও সম্পদের মধ্যে কোনটি উত্তম ?

– উত্তরে আলী (আ.) বললেন: জ্ঞান হচ্ছে উত্তম; কেননা জ্ঞান হচ্ছে নবীদের মি’রাসী সম্পদ আর ধন -সম্পদ হচ্ছে কারুন, ফেরাউন, হামান ও শাদ্দাদের মি’রাসী সম্পদ।

লোকটি যে নিজের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে চুপ হয়ে গেল।

এমন সময় আরেক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করলো এবং যেভাবে দাঁড়িয়ে ছিল প্রশ্ন করলো:

হে আবাল হাসান ! আমার একটি প্রশ্ন আছে জিজ্ঞেস করার অনুমতি আছে কি ? ইমাম (আ.) উত্তরে বললেন: অনুমতি রয়েছে জিজ্ঞেস করতে পারো ! লোকটি যেহেতু সবার পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল জিজ্ঞেস করলো:

জ্ঞান ও সম্পদের মধ্যে কোনটি উত্তম ?

– আলী (আ.) বললেন: জ্ঞান হচ্ছে উত্তম; কেননা জ্ঞান তোমাকে রক্ষা করবে, কিন্তু ধন -সম্পদকে তুমি রক্ষা করতে বাধ্য।

দ্বিতীয় ব্যক্তিটিও যে, তার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে সন্তুষ্ট হয়ে গিয়েছিল, যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল বসে পড়লো।

এবার তৃতীয় ব্যক্তি প্রবেশ করলো, সেও পুনর্বার একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলো।

– আর ইমাম (আ.) তার উত্তরে বললেন: জ্ঞান হচ্ছে উত্তম; কেননা জ্ঞানী ব্যক্তির অনেক বন্ধু রয়েছে, কিন্তু ধনী ও সম্পদশালী ব্যক্তির শত্রু হচ্ছে বেশি।

তখনও ইমামের (আ.) কথা শেষ হয়নি চতুর্থ ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করলো। সে তার বন্ধুদের পাশে বসে হাতের আ’সা (লাঠি) সামনে রাখলো এবং জিজ্ঞেস করলো:

হে আলী ! জ্ঞান ও সম্পদের মধ্যে কোনটি উত্তম ?

– হযরত আলী (আ.) সেই লোকটির উত্তরে বললেন: জ্ঞান হচ্ছে উত্তম; কেননা যদি সম্পদ হতে তুমি ব্যয় কর তা কমতে থাকবে; কিন্তু যদি জ্ঞান হতে কাউকে শিক্ষা দান কর তা বৃদ্ধি পাবে।

এবার ছিল পঞ্চম ব্যক্তির পালা। কিছুক্ষণ পূর্বে সে মসজিদে প্রবেশ করে মসজিদের কোন এক স্তম্ভের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। ইমামের (আ.) কথা শেষ হতেই পুনর্বার সে একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলো।

– হযরত আলী (আ.) সেই লোকটির উত্তরে বললেন: জ্ঞান হচ্ছে উত্তম; কেননা জনগণ ধনী ও সম্পদশালী ব্যক্তিকে কৃপণ মনে করে, কিন্তু আলেম ও জ্ঞানী ব্যক্তিকে মহত্ত্ব ও সম্মানের সাথে মনে করে।

ষষ্ঠ ব্যক্তি প্রবেশ করার সাথেই সবাই পেছনে ফিরে তাকালো, আশ্চর্যের সাথে সবাই তার প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। জনসমষ্টির মধ্য হতে একজন বলে উঠলো: অবশ্যই এ লোকটিও জানতে চায় যে, জ্ঞান ও সম্পদের মধ্যে কোনটি উত্তম ! যারা তার কথা শুনছিল, ব্যঙ্গাত্মক ভাবে হাসলো। লোকটি, সবার পেছনে বসে উচ্চস্বরে বলতে শুরু করলো:

হে আলী ! জ্ঞান ও সম্পদের মধ্যে কোনটি উত্তম ?

– ইমাম (আ.) জনগণের দিকে একবার ফিরে তাকালেন, অতঃপর বললেন: জ্ঞান হচ্ছে উত্তম; কেননা ধন সম্পদকে চোর চুরি করে নিয়ে যেতে পারে, কিন্তু জ্ঞান চুরি হওয়া সম্পর্কে কোন ভয় ভীতি নেই। লোকটি চুপ হয়ে গেল। জনগণের মধ্যে হৈ চৈ শুরু হয়ে গেল; আজ কি হল ! সবাই কেন একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছে ? আশ্চর্য ভাবে সবার দৃষ্টি একবার হযরত আলীর (আ.) দিকে এবং আরেকবার নতুন প্রবেশকারী লোকদের উপর উপবিষ্ট হয়ে রইলো।

এমন সময় সপ্তম ব্যক্তি যে, হযরত আলীর (আ.) কথা শেষ হবার কিছুক্ষণ পূর্বে মসজিদে প্রবেশ করেছিল এবং জনগণের মাঝখানে বসেছিল, জিজ্ঞেস করলো:

হে আবাল হাসান ! জ্ঞান ও সম্পদের মধ্যে কোনটি উত্তম ?

– ইমাম (আ.) হাত তুলে সবাইকে নীরব থাকার ইশারা করে বললেন: জ্ঞান হচ্ছে উত্তম; কেননা সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে সম্পদও পুরনো হয়ে যায় কিন্তু জ্ঞান যতই তার সময় যাক না কেন নষ্ট হয় না। লোকটি আস্তে আস্তে উঠলো এবং তার বন্ধুদের পাশে গিয়ে বসলো; তারপর বন্ধুদের দিকে ফিরে বললো: নবীর (সা.) কথা অনর্থক ছিল না যে, বললেন: আমি জ্ঞানের শহর ও আলী (আ.) তার তোরণ ! তার কাছে যা জিজ্ঞেস করেছি, প্রত্যেকটির জবাব তার কাছে ছিল। জনগণের সামনে আমরা হাসির পাত্র না হয়ে যাই তাই অন্যদেরকে আসতে বারণ করে দেয়াটা ভাল হবে ! যে লোকটি তার পাশে বসেছিল বললো: কে বলতে পারে হয়তো যে কয়েকজন বাকি আছে তাদের প্রশ্নের জবাব দিতে ব্যর্থও হতে পারে। তখন জনগণের সামনে অপমানিত হবে আর আমরা আমাদের উদ্দেশ্যে পৌঁছে যাবো ! এক ব্যক্তি যে, দুরে বসেছিল বললো: যদি সঠিক উত্তর দিয়ে দেয় তখন কি হবে ? তখন আমাদেরকে জনগণের সামনে অপমানিত হতে হবে ! লোকটি শান্তভাবে বললো: তোমাদের কি হয়েছে ? এখনই পিছপা হয়ে যাচ্ছ ! আমাদের কথা কি ছিল, তা কি ভুলে গেছ ? আমাদেরকে অবশ্যই নবী করিম (সা.) যা বলেছেন তার বিপরীত কথা প্রমাণ করতে হবে।

এমন সময় অষ্টম ব্যক্তি প্রবেশ করে পূর্বের প্রশ্নটিই জিজ্ঞেস করলো:

– ইমাম (আ.) তার উত্তরে বললেন: জ্ঞান হচ্ছে উত্তম; কেননা ধন -সম্পদ শুধুমাত্র মৃত্যু পর্যন্ত তার মালিকের সাথে থাকে, কিন্তু জ্ঞান, এ পৃথিবীতে এবং মৃত্যুর পরও মানুষের সাথে থাকে।

সবাই চুপ হয়ে গিয়েছিল, কেউই কোন কথা বলছিল না। সবাই ইমামের উত্তর শুনে আশ্চর্য হয়ে  গিয়েছিল যে, …

নবম ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে এবং জনগণের বিস্ময় ও আশ্চর্যের মধ্যেই জিজ্ঞেস করলো: হে আলী ! জ্ঞান ও সম্পদের মধ্যে কোনটি উত্তম ?

– ইমাম (আ.) মুচকি হেসে বললেন: জ্ঞান হচ্ছে উত্তম; কেননা ধন -সম্পদ মানুষকে নিষ্ঠুর করে দেয়, কিন্তু জ্ঞান মানুষের মনকে আলোকিত করে দেয়।

জনগণের বিস্মিত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় চোখ দরজার পানে চেয়ে ছিল, মনে হচ্ছিল সবাই দশম ব্যক্তির অপেক্ষা করছিল। এমন সময় এক ব্যক্তি বাচ্চার হাত ধরে মসজিদে প্রবেশ করে। সে সবার শেষে বসে এক মুঠো খেজুর শিশুটির হাতে দিল এবং সামনের দিকে তাকালো। জনগণ যারা চিন্তা করছিল যে হয়তো আর কেউ কিছু জিজ্ঞেস করবে না, সবাই মুখ ফিরিয়ে নিলো, এমন সময় লোকটি জিজ্ঞেস করলো:

হে আবাল হাসান ! জ্ঞান ও সম্পদের মধ্যে কোনটি উত্তম ? সবার বিস্মিত চোখ পেছনের দিকে তাকালো। আলীর (আঃ) কথা শুনে সবাই ফিরে তাকালো:

– জ্ঞান হচ্ছে উত্তম; কেননা ধনী ও সম্পদশালী ব্যক্তিরা অহংকারী হয়, এমন কি কখনও প্রভু হওয়ার দাবীও করে বসে, কিন্তু জ্ঞানী ব্যক্তিরা সব সময় বিনয়ী হয়। জনগণের হৈ চৈ, হট্টগোল, খুশি ও প্রশংসাতে কিছু শোনা যাচ্ছিল না। প্রশ্নকারীরা আস্তে আস্তে চুপচাপ জনগণের মাঝখান থেকে উঠে চলে গেল। যখন তারা মসজিদ থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল ইমামের (আ.) আওয়াজ শুনতে পেল যে, তিনি বলছিলেন: যদি পৃথিবীর সকল লোক এই একটি প্রশ্নই আমার কাছে জিজ্ঞেস করতে থাকে, তাদের প্রত্যেককে আমি বিভিন্ন রকম উত্তর দিতাম।

(তাকরিবে মাযাহেব)

Leave A Reply

Your email address will not be published.