মহান আল্লাহর সিফাতসমূহ নাম কী ৯৯টি না-১৪৫টি ?

0 878

লেখকঃ আলী নেওয়াজ খান, প্রভাশক আল মোস্তফা ইন্টানেশনাল বিশ্ববিদ্যালয়

আল্লাহর সকল বৈশিষ্ট্যই সুন্দর এবং সকল কামালিয়াত প্রভুর যা পরিগণনা করা অসম্ভব । তবে বিভিন্ন রেওয়ায়েতে ৯৯টি নামের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আহলে সুন্নাতের হাদীস গ্রন্থসমুহ যেমন সাহি বোখারী, মুসলিম এবং তিরমিজিতেও বর্ণিত হয়েছে । মহান আল্লাহর রব্বুল আলামীনের নাম সমূহ পাঠের ফজিলত সম্পর্কে বলা হয়েছে কোন ব্যক্তি যদি ঐ নামের উসিলায় প্রার্থনা করেন তাহলে তার প্রার্থনা মঞ্জুর হয়ে যাবে । আর যদি কোন ব্যক্তি ঐ নামগুলো পাঠ করেন বা পরিগণনা করেন তাহলে তিনি বেহেস্তী হবেন । তবে এখানে শুধুমাত্র ঠোট নেড়ে নামসমূহ যপ করাই লক্ষ্য নয় বরং ঐ নামগুলোর সাথে নিজের অন্তরের সম্পর্ক স্থাপন ও প্রত্যেকটি নাম থেকে শিক্ষা নিয়ে তার প্রতি মনোনিবেশ করতে হবে । উল্লেখিত ৯৯টি নাম হল:[তাফসির আল মিযান ও তাফসির-এ নামুনা]
اللّه، اله، الواحد، الاحد، الصّمد، الاوّل، الآخر، السّميع، البصير، القدير، القاهر، العلىّ، الاعلى، الباقى، البديع، البارّ، الاكرم، الظاهر، الباطن، الحىّ، الحكيم، العليم، الحليم، الحفيظ، الحقّ، الحسيب، الحميد، الحفىّ، الربّ، الرّحمن، الرّحيم، الذّارء، الرّازق، الرّقيب، الرؤوف، الرّائى، السّلام، المؤمن، المهيمن، العزيز، الجبّار، المتكبّر، السيّد، السُبّوح، الشهيد، الصادق، الصانع، الطاهر، العدل، العفو، الغفور، الغنىّ، الغياث، الفاطر، الفرد، الفتّاح، الفالق، القديم، الملك، القدّوس، القوىّ، القريب، القيّوم، القابض، الباسط، قاضى‏الحاجات، المجيد، المولى، المنّان، المحيط، المبين، المقيت، المصوّر، الكريم، الكبير، الكافى، كاشف الضرّ، الوتر، النور، الوهّاب، الناصر، الواسع، الودود، الهادى، الوفىّ، الوكيل، الوارث، البرّ، الباعث، التوّاب، الجليل، الجواد، الخبير، الخالق، خير النّاصرين، الديّان، الشكور، العظيم، اللطيف، الشافى

তবে পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর ১৪৫ টি নাম উল্লেখ হয়েছে আর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে ৯৯ টি নাম । [তাফসির আল মাজমাউল বাইয়ান, তাফসির নুরুল সাকালাইন এবং তাওহীদ-এ সাদুক ]
পবিত্র কুরআন ও হাদিসে নামের সংখ্যার ভিন্নতার কারণ সম্পর্কে যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে তাহল: কোন কোন মুফাসসির মনে করেন পবিত্র কোরআনে উল্লেখিত নাম সমূহের কোন কোন আরকেটি নামের সমার্থক অর্থ প্রকাশ করে বা সমপর্যায়ের অর্থ দিয়ে থাকে এজন্য কোন কোন ক্ষেত্রে দুটি নাম একটি করা হয়েছে। অথবা ৯৯টি নাম উল্লেখের উদ্দেশ্য হল যে এই নামগুলোও পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে । এমনটি নয় যে উল্লেখিত ৯৯টি নামের বাইরে মহান প্রতিপালকের আর কোন নাম নেই ।
পবিত্র কোরআনের কোন কোন আয়াতে এমন কিছু নাম উল্লেখ করা হয়েছে ; উদহারণ স্বরূপ পবিত্র কুরআনের এই আয়াতটিতে মহান আল্লাহ নিজেকে সত্যবাদী হিসাবে উল্লেখ করেছেন و من أصدق من اللّه قيلًا [সুরা নিসা ১২২ নম্বর আয়াত] আল্লাহর চেয়ে সত্যবাদী আর কে হতে পারে ? অথচ সাদিক (صادق) শব্দটি কোরআনে আসেনি । আবার জৌশানে কাবীর- মোনাজাতে মহান প্রতিপালকের আরো অন্যান্য নামও উল্লেখিত হয়েছে ।
‘আসমাউল হুসনা’
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেন: মহান প্রতিপালকের কসম আমরাই হলাম ‘আসমাউল হুসনা’ । [ তাফসির আল নুরুল সাক্বলাইন, উদ্ধৃতি উসুল আল ক্বাফী প্রথম খন্ড, ১৪৩ পৃষ্ঠা ।] অর্থাৎ মহান প্রতিপালকের বৈশিষ্ট্যসমূহ আমাদের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে বা প্রকাশ পেয়েছে । তাই খোদাপরিচিতির পথ হলাম আমরা ।
অন্য আরেকটি রেওয়ায়েতে ইমাম রেজা (আ.) বলেন: আমরা হলাম মাহন আল্লাহর সর্বোৎকৃষ্ট নাম সমূহ তাই আমাদের পরিচিতি ব্যতীত কারো ইবাদত গৃহীত হবে না। তিনি বলেন:
نَحْنُ و الله الاْسْماءُ الحسنى الَّتى لاَ يَقْبَلُ اللهُ عَمَلا مِنَ الْعِبادِ إِلاّ بمَعْرِفَتِنا
; اصول كافى، ج 1، ص 143 ( উসুল আল ক্বাফী, ১খন্ড, ১৪৩ পৃ, তাফসিরে ইসনা আশারা) ।
পবিত্র কুরআনে চারটি স্থানে ‘আসমাউল হুসনা’ বাক্যটি ব্যবহৃত হয়েছে ; সুরা আরাফ ১৮১ নম্বর আয়াত, সুরা বনি ইসরাইল ১১০ নম্বর আয়াত, সুরা ত্বাহা ৮ নম্বর আয়াত, সুরা হাশর ২৪ নম্বর আয়াত ।
‘আসমাউল হুসনা’র তিনটি অর্থ করা হয়েছে (১) আল্লাহর সিফাত সমূহ (২) প্রভুর নাম সমূহ (৩) আল্লাহর বিশেষ উলীগণ বা ইমামগণ । [তাফসিরে ফুরকান]
ইমাম রেজা (আ.) বলেন: তোমাদের উপর যখন কোন কষ্ট বা সমস্যা নেমে আসে তখন তোমরা আমাদের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর । আল্লাহর শপথ আমরা ‘আসমাউল হুসনা’ وللّه الاسماء الحسنى فادعوه بها [বিহারুল আনোয়ার ৯১ খন্ড, ৫ নম্বর পৃষ্ঠা]
ইমাম রেজা (আ.) বলেন: انّ الخالق لا يوصف الّا بما وصف به نفسه মহান আল্লাহর রব্বুল আলামীন নিজেকে যেসকল নামের মাধ্যমে পরিচয় দিয়েছেন তার বাইরে ভিন্ন নামে তাঁকে আখ্যায়িত করা যাবে না। কোন ব্যক্তি তার নিজের পক্ষ থেকে কোন নাম দিয়ে তাঁকে আখ্যায়িত করতে পারবেন না। যেমন: شجاع সাহসী, عفيف পবিত্র ইত্যাদি । [তাফসিরে ফুরকান]
প্রতিটি নাম উক্ত সত্তার পরিচয় বহন করে থাকে মহান প্রভুর সত্তা পবিত্র তাই তাঁকে বিশেষিত করা প্রতিটি নামই পবিত্র ।
আর এজন্যেই পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে যে سبحانه عمّا يشركون তারা মহান প্রতিপালক সম্পর্কে যে শিরক করে তা থেকে তিনি পুত:পবিত্র ।[সুরা তওবা ৩১ নম্বর আয়াত] একইভাবে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে سبّح اسم ربّك الاعلى মহান প্রতিপালকের নাম সকলপ্রকারের ত্রুটির উর্দ্ধে [সুরা আলা ১ নম্বর আয়াত] আর এজন্যেই অন্যের নাম আল্লাহর নামের সারিতে রাখা বৈধ নয় ; একইভাবে মহান আল্লাহ সেসকল নামে নিজেকে পরিচয় দিয়েছেন ঐসকল নামে কোন ব্যক্তির নামকরণ করা ডাকা যাবে না । যেমন , জাব্বার, কাইউম, হান্নান ইত্যাদি ।
শহীদ ওস্তাদ মুতাহারী বলেন: মহান প্রতিপালকের নামসমূহ শুধুমাত্র তাঁর নিশানাই নয় বরং তাঁর পবিত্র সত্তার রহস্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের পরিচয়বহন করে থাকে । [অশনায়ী বা কুরআন, ১৪ নম্বর পৃষ্ঠা,]

Leave A Reply

Your email address will not be published.