ইবনে ফায্যাল ইমাম রেযা (আঃ) হতে এবং তিনি তার পূর্বপুরুষগণ হতে এবং তারা রাসূলে আকরাম (সাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যেঃ একদিন কায়েনাতের (বিশ্বের) সরদার রাসূল (সাঃ) জনগণের সামনে নসিহত করছিলেন এই বলে যে,
হে জনগণ! রহমত, বরকত ও মাগফেরাত সহ মাহে রমযান তোমাদের নিকট উপস্থিত হয়েছে। এ মাস খোদার নিকট সর্বোত্তম মাস, এর দিনগুলো সর্বোত্তম দিন এবং এর রাতগুলো সর্বোত্তম রাত এবং এর ঘন্টাগুলো (সময়) সর্বোত্তম ঘন্টা (সময়)।
ঐ মাস আল্লাহর পক্ষ থেকে মেহমানদারির মাস এবং ঐ মাস খোদার মহানুভবতা এবং দয়ার মাস। তোমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস ঐ মাসে তাসবীহ্ (মহান আল্লাহর গুণগান) তোমাদের ঘুম এ মাসে ইবাদতের সমান এবং তোমাদের আমল এ মাসে কবুল হবে এবং তোমাদের দোয়া গৃহীত হবে।
মাহে রমযান মহানুভব আল্লাহর মেহমানীর মাস। আমরা আল্লাহর রহমত বরকত ও মাগফেরাতের এই মাসে আমরা যেন সওয়াব থেকে বঞ্চিত না হই সে জন্য আমরা আমাদের সর্বোত্তম চেষ্টা করব।
দোয়ার উপকারিতা
(এ সম্পর্কিত হাদীস সমূহ)
১) ঢাল স্বরূপ
= রোযা জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষাকারী ঢাল স্বরুপ।
২) শারিরীক শুদ্ধতা
= রোযা রাখ যাতে সুস্থ থাকতে পার।
৩) অপমানিত শয়তান
= রোযা শয়তানকে অপমানিত করে।
৪) সওয়াব আল্লাহর নিকট
= মহান আল্লাহ বলেন রোযা আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দিব।
৫) ইসলামের অন্যতম রোকন বা ভিত্তি
= ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত (নামায, যাকাত, হজ্জ, রোযা এবং বেলায়াত)
৬) শরীরের যাকাত।
= প্রত্যেকটি জিনিসের যাকাত রয়েছে এবং শরীরের যাকাত হচ্ছে রোজা।
৭) সামাজিক ভারসাম্য
= নিশ্চয়ই আল্লাহ রোযাকে ফরয করেছেন যাতে ধনী ও গরীব এক সমান হতে পারে এবং সম্পদশালী এবং সম্পদহীনের মধ্যে যেন পার্থক্য না থাকে।
রোযাদারের কর্তব্য
(ক) আল্লাহর প্রতি:
১) কোরআন তিলাওয়াত করা
= যদি কেউ এ মাসে কোরআনের একটি আয়াত তেলাওয়াত করে তার সওয়াব অন্য মাসে পুরো এক খতম কোরআন তেলাওয়াত করার সমান।
২) নামায
= যদি কেউ এ মাসে মুস্তাহাব নামায আদায় করে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তপ্রাপ্ত হিসেবে লিখবেন।
৩) দোয়া এবং তওবা করা
= নামাযের সময় তোমরা তোমাদের হাতগুলোকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে উত্তোলন কর।
৪) ওয়াজিব (ফরয)সমূহ
= যদি কেউ এ মাসে ওয়াজিব নামায আদায় করে, তার সওয়াব ঐ নামাযীর সমান যে সত্তরটি ওয়াজিব অন্য মাসে আঞ্জাম দিয়েছে।
৫) পরকালের স্মরণ
= তোমরা তোমাদের ক্ষুধা ও তৃষ্ণাকে স্মরণ কর কেননা কেয়ামতের দিন ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত হতে হবে।
তোমরা তোমাদের রোযার ক্ষুধা ও তৃষ্ণার্তে কিয়ামতের দিনের ক্ষুধা ও তৃষ্ণাকে স্মরণ কর।
রাসূল (সাঃ)বলেছেন: প্রত্যেকটি জিনিসের দরজা রয়েছে, আর ইবাদতের দরজা হচ্ছে রোজা।
কোরআন তিলাওয়াত
রাসূল (সাঃ)বলেছেন:
১) প্রত্যেকটি জিনিসের বসন্ত রয়েছে, আর কোরআনের বসন্ত হচ্ছে রমজান মাস।
২) কিয়ামতের দিন রাসূল (সাঃ)বলবেন:
হে আমার প্রতিপালক! নিশ্চয়ই আমার কওম এ কোরআনকে পরিত্যাগ করেছে (ফোরকানঃ ৩০)
৩) যতটুকু সম্ভব হয় কোরআন তিলাওয়াত কর। (মুয্যাম্মিল-২০)
কুরআন
যদি কেউ এ মাসে কোরআনের একটি আয়াত তেলাওয়াত করে তার প্রতিফল হল এরকম যেন সে অন্য মাসে পুরো কোরআন তেলাওয়াত করেছে।
(খ) মানুষের প্রতি:
১) নিকটাত্মীয়
= নিকটাত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা।
২) উত্তম চরিত্র
= যে কেউ এ মাসে উত্তম আচরণ করবে তার জন্য সে দিন যেদিন সবার পা আল্লাহর সৃষ্টির সাথে প্রকম্পিত হবে সেদিন তাকে পুলসিরাত অতিক্রম করার অনুমতি দেয়া হবে।
৩) ইফতার
= হে লোকসকল! যদি তোমাদের কেউ এ মাসে কোন মুমিনকে ইফতার করায় আল্লাহর নিকট তার সওয়াব হল একজন দাস মুক্তি দেয়ার সমান। এবং তার পূর্বের গুনাহকে মাফ করে দেয়া হবে।
৪) বৃদ্ধ ব্যক্তি বা ছোটরা
= তোমাদের বয়স্কদের সম্মান ও শ্রদ্ধা কর এবং ছোটদের স্নেহ করো।
৫) এতিম
= এতিমদের সাথে সদাচরণ করো, তাহলে তোমার এতিমদের সাথে সদাচরণ করা হবে।
৬) ফকির
= ফকির ও অসহায় ব্যক্তিদের সদকা দাও।
(গ) নিজের প্রতিঃ
১) শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ
= যে কেউ মন্দ খাবার হতে দূরে থাকবে কিয়ামতের দিন সে আল্লাহর গজব হতে নিরাপদ থাকবে।
২) যবান/ জিহবা
= তোমাদের জিহবাকে সংযত কর।
৩) চোখ
= যে সব জিনিসের প্রতি দৃষ্টিপাত করা হালাল (বৈধ) নয় সে সব জিনিসের প্রতি দৃষ্টিপাত করো না।
৪) কান
= যে সব জিনিসের প্রতি কর্ণপাত করা হারাম সে সব জিনিসের প্রতি কান দিওনা।
৫) মানুষ নিজে
= আল্লাহর নিষিদ্ধকৃত বিষয় হতে বিরত থাকা।
আমিরুল মুমিনীন আলী (আঃ) বলেনঃ আমি দাঁড়ালাম ও প্রশ্ন করলাম এ মাসে সর্বোত্তম আমল কোনটি?
হযরত রাসূল (সাঃ) বললেনঃ হে আবুল হাসান! এ মাসের সর্বোত্তম আমল হচ্ছে মহান আল্লাহর সামনে গুনাহ না করা।
ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। রোযা এর মধ্যে একটি ভিত্তি।
ইমাম বাকির (আঃ) বলেনঃ ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত নামাজ, যাকাত, হজ্জ, রোযা এবং বিলায়াত।
ইমাম সাদিক (আঃ) বলেনঃ আল্লাহর প্রতি বান্দাদের নিকটতর অবস্থা হল যখন তার পেট হালকা থাকে।
রাসূল (সাঃ) বলেনঃ সর্বোত্তম ইবাদত হল উদর ও নিম্নাঙ্গকে হারাম হতে বিরত রাখা।
পেটের ভেতরের অবস্থা
আল্লাহর নিকট মানুষের সবচেয়ে মন্দ অবস্থা হল, যখন ভরা পেটে থাকে।
ইমাম কাজিম (আঃ) বলেনঃ যে পেট খাওয়ার পর পরিতৃপ্ত হয়না সে পেটকে আল্লাহ ভালোবাসেন না।
হযরত আলী (আঃ)বলেন:
তোমাদের উপর রমজান মাসের রোযা ফরজ করা হয়েছে। আর এ রোযা গুনাহর ক্ষেত্রে মজবুত ঢাল স্বরূপ।