মানবতার মুক্তির দূত

৫৭০ খ্রিস্টাব্দে পবিত্র ১২ই রবিউল আউয়াল মতান্তরে ১৭ই রবিউল আউয়াল আরবের মক্কানগরীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মানবতার মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)তিনি হচ্ছেন, বিশ্বের সকল কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, বিজ্ঞানী এবং লেখকদের লেখনীর উযাকে নিয়ে লেখার অন্ত নেই, রচনার শেষ নেইসব দেশের সব ভাষাতেই মহানবী (সাঃ) কে নিয়ে এত বিপুল সংখ্যক বই-পুস্তক রচিত হয়েছে যে, এটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী রেকর্ড ও বিষ্ময়! কিন্তু চৌদ্দ শতাধিক বছরের এই ক্রমাগত আলোচনার পরও মনে হয়, মহানবী (সাঃ) নিয়ে এতদিনের এই আলোচনা যেন মূল আলোচনার একটি ভুমিকা মাত্রপ্রকৃত আলোচনা এখনও শুরুই হয়নিসত্যি বলতে কি, পৃথিবীর বাঘা বাঘা কবি সাহিত্যিক, ইতিহাসবিদ ও লেখকরা রাসূলের গুণের হিসাব করতে গিয়ে বিস্মিত! কারণ মানব চরিত্রের এমন কোন ভাল গুণ নেই যা রাসুল (সাঃ) এর চরিত্রে অনুপস্থিততাই তো জর্জ বার্নাডশ বলেছেন মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনী হল, এক তলাবিহীন সাগর এবং সীমাবিহীন সীমানার ন্যায় অন্যদিকে ইতিহাসবিদ যোশেফ হল বলেছেন, মুহাম্মদ (সাঃ) এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন যাকে না পেলে বিশ্ব অসম্পূর্ণ থেকে যেততিনি নিজেই নিজের তুলনা

তাঁর কীর্তিময় ইতিহাস মানব জাতির ইতিহাসে এক সমুজ্জ্বল অধ্যায় রচনা করেছে

মুহাম্মদ (সাঃ) আবির্ভাবের সময় আরবসহ সারা বিশ্ব যুদ্ধ, সংঘাত, মারামারি, অশ্লীলতা ইত্যাদিতে ভরপুর ছিলএ অবস্থা থেকে বাঁচার জন্য মুক্তি পাগল মানুষরা এমন একজন মহামানবের অপেক্ষা করছিল, যিনি মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের দিকে আহবান করবেনঅবশেষে মানুষের প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে যেদিন মা আমিনার কোল জুড়ে শিশু মুহাম্মদ আগমন করলেন, সেদিন সারা বিশ্বে আনন্দ ও খুশীর বার্তা ছড়িয়ে পড়লসেই শুভ ক্ষণটির বর্ণনা দিতে গিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম তার মরু ভাস্করগ্রন্থে লিখেছেন-

জেগে ওঠ্‌ তুই রে ভোরের পাখি, নিশি প্রভাতের কবি
লোহিত সাগরে সিনান করিয়া উদিল আরব রবি
ওরে ওঠ্‌ তুই নতুন করিয়া বেঁধে তোল তোর বীণ
ঘন আঁধারের মিনারে ফুকারে আজান মুয়াজ্জিন
কাঁপিয়া উঠিল সে ডাকের ঘোরে গ্রহ,রবি,শশী, ব্যোম
ঐ শোন শোন সালাতেরধ্বনি খায়রুম-মিনান্নৌম

রাসূল (সাঃ) এই দুনিয়ায় আগমন করার পর কেবল আরবের নির্যাতিত মানুষরাই খুশী হয় নি পাহাড়, পর্বত, মরুভূমি, গাছগাছালি সব কিছুই যেন খুশীতে আত্মহারা হয়েছিল কবি নজরুলের ভাষায়-

বয়ে যায় ঢল, ধরে নাকো জল আজি জমজম কুপে
সাহারা আজিকে উথলিয়া ওঠে অতীত সাগর রূপে
পুরাতন রবি উঠিল না আর সেদিন লজ্জা পেয়ে
নবীন রবির আলোকে সেদিন বিশ্ব উঠিল ছেয়ে

মা আমিনার কোল জুড়ে শিশু মুহাম্মদের আগমনের পর আরবসহ সারা জাহানের অবস্থা কেমন হয়েছিল সে সম্পর্কে কবি বন্দে আলী মিয়া একটি নাতে রাসূল লিখেছেন
আরবের মরুর বুকে ফুটল আলোর ফুল
মা আমিনার কোলে এলেন মুহাম্মদ রাসূল

রাসূল (সাঃ) যে মিশন নিয়ে দুনিয়ায় এসেছিলেন তা আবারো ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবেআর তাহলেই আজকের এ অশান্তিময় ও ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ বিশ্বে আবারও শান্তির সুবাতাস বইতে শুরু করবেকারণ রাসূল ( সাঃ) এ পৃথিবীতে এসেছিলেন একটি শান্তি ও স্বপ্নময় পৃথিবী গড়ার দায়িত্ব নিয়ে যেখানে মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ থাকবে না

মানুষ ইসলাম থেকে, রাসূলের আদর্শ থেকে দুরে সরে যাবার কারণে এ পৃথিবী আবারো অশান্তিতে ভরে গেছেএ অবস্থায় রাসূলের আদর্শ বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই আর এ বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করে মার্কিন সমাজ বিজ্ঞানী থমাস কালাথন বলেছেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, মুহাম্মদ (সাঃ) এর হাতের মুঠোয় যদি পৃথিবীকে তুলে দেয়া হয় তবে এই পৃথিবীতে আবারো শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে

রাসুলের আগমনের কারণে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল এবং আবারো যদি তার আদর্শকে বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে এ পৃথিবী আবারো শান্তিতে পরিপূর্ণ হবেতবে মুহাম্মদ ( সাঃ) যদি এ পৃথিবীতে না আসতেন তাহলে জগতবাসীর কি অবস্থা হতো সে সম্পর্কে বাংলাদেশের ইসলামী রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমদ লিখেছেন-

তুমি না আসিলে মধুভান্ডার ধরায় কখনো হত না লুট,
তুমি না আসিলে নার্গিস কভু খুলত না তা পত্রপুট
বিচিত্র আশা-মুখর মাশুক খুলত না তার রুদ্ধ দিল
দিনের প্রহরী দিত না সরায়ে আবছা আঁধার কালো নিখিল

বিশ্বের বড় বড় ইতিহাসবিদ, গবেষক, বিজ্ঞানী, দার্শনিকসহ সকল জ্ঞানীগুণী মানুষরা স্বীকার করেছেন যে, মুহাম্মদ (সাঃ)ই হচ্ছেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষমাইকেল এইচ হার্টস তার আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থ দি হান্ড্রেডসএ সম্পর্কে লিখেছেন, পৃথিবীর ইতিহাসে প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের তালিকার শীর্ষে মুহাম্মদ (সাঃ) এর নাম অন্তর্ভূক্ত করায় অনেকেই বিষ্মিত হতে পারেনকিন্তু ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি ধর্মীয় ও বৈষয়িক উভয়ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব ও নজিরবিহীন সাফল্য অর্জন করেছেন
পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী উতযাপন তখনই স্বার্থক হবে যখন আমরা রাসূলের আদর্শের আলোকে নিজেদের জীবন গড়ে তুলতে পারবো

 

Comments (0)
Add Comment