দ্বাদশ ইমাম পন্থীদের দৃষ্টিতে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস

দ্বাদশ ইমাম পন্থীদের দৃষ্টিতে ইসলামের  মৌলিক বিশ্বাস

দ্বাদশ ইমামপন্থীদের দৃষ্টিতে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস অস্তিত্ব ও বাস্তব জগতের প্রতি দৃষ্টিপাতআল্লাহর অস্তিত্বের আবশ্যকতা মানুষ তার স্বভাবগত উপলব্ধি ক্ষমতা যা জন্ম সূত্রে প্রাপ্ত তার মাধ্যমে সর্ব প্রথম যে কাজটি করে, তা হল এ বিশ্ব জগত ও মানব জাতির স্রষ্টার অস্তিত্বকে তার জন্য সুস্পষ্ট করে দেয়
অনেকেই নিজের অস্তিত্ব সহ সবকিছুর প্রতিই সন্দিহানতারা এ বিশ্বজগতের অস্তিত্বকে এক ধরণের কল্পনা ছাড়া অন্য কিছু মনে করে নাকিন্তু আমরা সবাই জানি যে, একজন মানুষ সৃষ্টির পর থেকেই স্বভাবগত অনুভুতি ও উপলব্ধি ক্ষমতা সম্পন্নতাই জন্মের পর থেকেই সে নিজের এবং এ বিশ্ব জগতের অস্তিত্ব উপলব্ধি করেঅর্থা এ ব্যাপারে তার মনে সন্দেহের উদ্রেক হয় না যে, সে আছে এবং সে ছাড়াও তার চর্তুপার্শে আরও অনেক কিছুই আছেমানুষ যতক্ষণ মানুষ হিসেবে গণ্য হবে, ততক্ষণ এ জ্ঞান ও উপলব্ধি তার মধ্যে কোন সন্দেহের উদ্রেক ঘটাবে না, অথবা এ ধারণার মধ্যে কোন পরির্বতনও ঘটবে নাসুফিষ্ট ( যে মতে সত্যকে আপেক্ষিক গণ্য করা হয়) ও সংশয়বাদীদের বিপরীতে এ বিশ্ব জগতের অস্তিত্বও তার বাস্তবতা সম্পর্কিত মানুষের এ বিশ্বাস একটি প্রমাণিত ও বাস্তব সত্যবিষয়টি একটি চিরন্তন বিধি, যা অপরিবর্বতনশীলঅর্থা এ সৃষ্টিজগতের অস্তিত্বকে অস্বীকারকারী ও তার বাস্তবতায় সন্দেহ পোষণকারী সুফিষ্ট বা সংশয়বাদীদের বক্তব্য মোটেই সত্য নয়বরং এ সৃষ্টি জগতের অস্তিত্ব এক বাস্তব সত্যকিন্তু আমরা যদি এ বিশ্ব জগতের সৃষ্টিনিচয়ের প্রতি লক্ষ্য করি, তাহলে অবশ্যই দেখতে পাব যে, আগে হোক আর পরেই হোক, প্রত্যেক সৃষ্টিই এক সময় তার অস্তিত্ব হারাতে বাধ্য হয় এবং ধ্বংস হয়ে যায়আর এখান থেকে এ বিষয়টি সম্পূর্ণ স্পষ্ট হয়ে যায় যে, আমাদের দৃশ্যমান এ সৃষ্টিজগতের অস্তিত্বই প্রকৃত অস্তিত্ব নয় বরং প্রকৃত অস্তিত্ব ভিন্ন কিছুবস্তুতঃ ঐ প্রকৃত অস্তিত্বের উপরই এই কৃত্রিম অস্তিত্ব নির্ভলশীলফলে অবিনশ্বর ও প্রকৃত অস্তিত্বের মাধ্যমেই এই কৃত্রিম অস্তিত্ব অস্তিত্ব প্রাপ্ত হয়কৃত্তিম অস্তিত্ব যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ প্রকৃত ও অবিনশ্বর অস্তিত্বের সাথে সর্ম্পকিত ও সংযুক্ত থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকবেআর যে মূহুর্তে ঐ সম্পর্ক ও সংযোগ বিচ্ছন্ন হবে, সে মূহুর্তেই কৃত্রিম অস্তিত্ব ধ্বংস হয়ে যাবে। [পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ উল্লেখিত দলিলটির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন: তাদের রাসুলগণ বলেছিলেনঃ আল্লাহ সম্পর্কে কি সন্দেহ আছে, যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের স্রষ্টা? (-সুরা আল্‌ ইব্রাহীম, ১০ নং আয়াত।)]আমরা অপরির্বতনশীল ও অবিনশ্বর অস্তিত্বকেই (অবশ্যম্ভাবী বা অপরির্হায অস্তিত্ব) আল্লাহনামে অবিহিত করি  মানুষ ও এ বিশ্বজগতের সম্পর্ক আল্লাহর একত্ববাদ আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণের লক্ষ্যে ইতিপূর্বে উল্লেখিত পদ্ধতিটি সকল মানুষের জন্যেই অত্যন্ত সহজবোধ্য ব্যাপারআল্লাহ প্রদত্ত জন্মগত উপলব্ধি ক্ষমতা দিয়েই মানুষ তা অনুধাবন করতে সক্ষম হয়উক্ত প্রমাণ পদ্ধতিতে কোন প্রকার জটিলতার অস্তিত্ব নেইকিন্তু অধিকাংশ মানুষই পার্থিব ও জড়বস্তুর সাথে সম্পর্কিত থাকার ফলে শুধুমাত্র অনুভবযোগ্য বস্তুগত আনন্দ উপভোগে অভ্যস্ত ও তাতে নিমগ্ন হয়ে আছেযার পরিণতিতে খোদাপ্রদত্ত সহজ-সরল প্রবৃত্তি ও অনুধাবন ক্ষমতার দিকে ফিরে তাকানো মানুষের জন্য অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছেইসলাম স্বীয় পবিত্র আদর্শকে সার্বজনীন বলে জনসমক্ষে পরিচিত করিয়েছে তাই ইসলাম তার পবিত্র লক্ষ্যের কাছে সকল মানুষকেই সমান বলে গণ্য করেযেসব মানুষ খোদাপ্রদত্ত সহজাত প্রবৃত্তি থেকে দুরে সরে গিয়েছে, মহান আল্লাহ‌ তখন অন্য পথে তাদেরকে তাঁর অস্তিত্ব প্রমাণে প্রয়াস পানমহান আল্লাহ‌ পবিত্র কুরআনে বিভিন্ন পন্থায় সাধারণ মানুষকে আল্লাহর পরিচয় লাভের শিক্ষা দিয়েছেনঐসবের মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মহান আল্লাহ‌ এ সৃষ্টিজগত ও তাতে প্রভুত্বশীল নিয়ম-শৃংখলার প্রতি মানব জাতির দৃষ্টি আর্কষণ করেছেনতিনি মানুষকে এ আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিরহস্য নিয়ে সুগভীর চিন্তা ভাবনা করার আহ্‌বান জানিয়েছেনকারণ, মানুষ তার এই নশ্বর জীবনে যে পথেই চলুক বা যে কাজেই নিয়োজিত থাকুক না কেন, সে এ সৃষ্টিজগত ও তাতে প্রভুত্ব বিস্তারকারী অবিচল নিয়ম শৃংখলার বাইরে বিরাজ করতে পারবে নাএকইভাবে সে এই পৃথিবী ও আকাশ মন্ডলীর বিস্ময়কর দৃশ্যাবলী অবলোকন ও উপলব্ধি থেকে বিরত থাকতে পারবে নাআমাদের সামনে দৃশ্যমান এ বিশাল জগতের [মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেনঃ নিশ্চয়ই নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে মুমিনদের জন্যে নির্দশনাবলী রয়েছেআর তোমাদের সৃষ্টিতে ও চারদিকে ছড়িয়ে রাখা জীব জন্তুর সৃজনের মধ্যেও নির্দশনাবলী রয়েছে বিশ্বাসীদের জন্যে, দিবা রাত্রির পরির্বতনে, আল্লাহ আকাশ থেকে যে রিযিক (বৃষ্টি) বষর্ন করেন অতঃপর পৃথিবীকে তার মৃত্যুর পর পুনরূজ্জীবিত করেন, তাতে এবং বায়ুর পরির্বতনে বুদ্ধিমানদের জন্যে নির্দশনাবলী রয়েছে। (-সুরা জাসিয়া, ৩ থেকে ৬ নম্বর আয়াত।)]সব কিছুই একের পর এক প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীলপ্রতি মূহুর্তেই নতুন ও অভুতপূর্ব আকারে এ প্রকৃতি আমাদের দৃশ্যপটে মূর্ত হচ্ছেআর তা ব্যতিক্রমহীন চিরাচরিত নিয়মে বাস্তবতার রূপ লাভ করছেসুদূর নক্ষত্র মন্ডল থেকে শুরু করে এ পৃথিবী গঠনকারী ক্ষুদ্র তম অণু-পরামাণু পর্যন্ত সকল কিছুই এক সুশৃংখল নিয়মের অধীনসকল অস্তিত্বের মধ্যেই এ বিষ্ময়কর আইন শৃংখলাস্বীয় ক্ষমতা বলে বলব রয়েছেযা তার ক্রীয়াশীল রশ্মিকে সর্বনিন্ম অবস্থা থেকে সর্বোন্নত পর্যায়ের দিকে ধাবিত করে এবং পূর্ণাঙ্গ লক্ষ্যে নিয়ে পৌঁছায়প্রতিটি বিশেষ শৃংখলা ব্যবস্থার উপর উচ্চতর শৃংখলা ব্য বস্থা প্রতিষ্ঠিতআর সবার উপরে বিশ্বব্যবস্থা বিরাজমানঅসংখ্য অণু-পরামণুর কণা সমন্বয়ে বিশ্ব জগত পরস্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়ে আছেক্ষুদ্রতর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাগুলোকেও ঐ সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অংশগুলো পরস্পরের সাথে সংযুক্ত করেছে এক্ষেত্রে আদৌ কোন ব্যতিক্রম নেই এবং তাতে কখনও কোন ধরণের বিশৃংখলা ঘটে নাউদাহরণ স্বরূপ এ সৃষ্টিজগত পৃথিবীর বুকে যদি কোন মানুষকে অস্তিত্ব দান করে, তাহলে এমনভাবে তার দৈহিক গঠনের অস্তিত্ব রচনা করে, যাতে তা পৃথিবীর পরিবেশের জন্য উপযোগী হয়একইভাবে তার জীবন ধারণের পরিবেশকে এমনভাবে প্রস্তুত করে যে, তা যেন দুগ্ধদাত্রী মায়ের মত আদর দিয়ে তাকে লালন করতে পারেযেমন: সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ, তারা, মাটি, পানি, দিন, রাত, ঋতু, মেঘ, বৃষ্টি, বায়ু, ভূগর্ভস্থ সম্পদ, মাটির বুকে ছড়ানো সম্পদ….. ইত্যাদি তথা এ বিশ্বজগতের সমুদয় সৃষ্টিকূল একমাত্র এই মানুষের সেবাতেই নিয়োজিত থাকেএই অপূর্ব সম্পর্ক আমরা সমগ্র সৃষ্টিনিচয়ে বিরাজমান দেখতে পাইএ ধরণের সুশৃংখল ও নিবিড় সম্পর্ক আমরা বিশ্বের প্রতিটি সৃষ্ট বস্তুর মধ্যেই খুঁজে পাইপ্রকৃতি যেমন মানুষকে খাদ্য দিয়েছে,  তেমনি তা আনার জন্যে তাকে পা দিয়েছেখাদ্য গ্রহণ করার জন্য দিয়েছে হাত এবং খাওয়ার জন্যে দিয়েছে মুখচিবানোর জন্যে তাকে দিয়েছে দাঁত আর এই মাধ্যমগুলো একটি শিকলের অংশ সমূহের মত পরস্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত, যা মানুষকে মহান ও পূর্ণাঙ্গ লক্ষ্যে পৌঁছার জন্যে পরস্পরকে সংযুক্ত করেছেএ ব্যাপারে বিশ্বের বিজ্ঞানীদের কোন সন্দেহ নেই যে, হাজার বছরের বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলে এ সৃষ্টিজগতে বিরাজমান সুশৃংখল ও অন্তহীন যে সম্পর্ক আবিস্কৃত হয়েছে, তা অনন্য সৃষ্টি রহস্যের এক নগণ্য নমুনা মাত্রপ্রতিটি নব আবিস্কৃত জ্ঞানই মানুষকে তার আরো অসীম অজ্ঞতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়বাহ্যতঃ পৃথক ও সম্পর্কহীন এ সৃষ্টিনিচয়, প্রকৃতপক্ষে এক গোপন সুত্রে অত্যন্ত সুদৃঢ় ও সুশৃংখলতার নিয়মের অধীনে আবদ্ধ, যা সত্যিই বিষ্ময়করএই অপূর্ব সুশৃংখল ব্যবস্থাপনা এক অসীম জ্ঞান ও শক্তির পরিচায়কতাহলে এটা কি করে সম্ভব যে এত সুন্দর ও সুশৃংখল ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত এ বিশাল জগতের কোন সৃষ্টিকর্তা নেই ? এটা কি বিনা কারণে, বিনা উদ্দেশ্যে এবং দূর্ঘটনা বশতঃ সৃষ্টি হয়েছে? এই ক্ষুদ্র ও বৃহত্তর তথা এ বিশ্বজগতের ব্যবস্থাপনা, যা পরস্পরের সাথে অত্যন্ত সুদৃঢ়রূপে সম্পর্কিত হয়ে এক বিশাল ব্যবস্থাপনার অবতারণা ঘটিয়েছে এবং ব্যতিক্রমহীন, সুক্ষ ও সুনির্দিষ্ট এক নিয়ম শৃংখলা এর সর্বত্র বিরাজমানএখন এটা কল্পনা করা কি করে সম্ভব যে, কোন ধরণের পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই এটা কোন দূর্ঘটনার ফসল মাত্র? অথবা, এ সৃষ্টিজগতের ছোট-বড় সকল সৃষ্টিকূলই একটি সুনির্দিষ্ট ও সুশৃংখল নিয়মতান্ত্রিকতা অবলম্বনের পূর্বে তারা নিজেরাই ইচ্ছেমত কোন পদ্ধতি অনুসরণ করে চলেছে এবং ঐ সুশৃংখল নিয়মতান্ত্রিকতার আর্বিভাবের পর তারা নিজেদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছে? অথবা এই সুশৃংখল বিশ্বজগত একাধিক ও বিভিন্ন কারণের সমষ্টিগত ফলাফল, যা বিভিন্ন নিয়মে পরিচালিত হয়? অবশ্য যে বিশ্বাস প্রতিটি ঘটনা বা বিষয়ের কারণ খুঁজে বেড়ায় এবং কখনো বা কোন একটি অজানা কারণকে জানার জন্য দিনের পর দিন গবেষণার মাধ্যমে প্রচেষ্টা চালিয়ে যায় সে কোন কিছুকেই কারণবিহীন বলে স্বীকার করতে পারে নাআর যে বিশ্বাস কিছু সুসজ্জিত ইটের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা বাড়ী দেখে এর গঠনের পেছনে এক গভীর জ্ঞান ও শক্তির ক্রিয়াশীলতাকে উপলব্ধি করে এবং একে আকস্মিক কোন দূর্ঘটনার ফলাফল বলে মনে করে নাবরং ঐ বাড়ীটিকে সে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে রচিত পূর্ব পরিকল্পনার ফসল বলেই বিশ্বাস করেএ ধরণের বিশ্বাস কখনোই মেনে নিতে পারেনা যে, এ সুশৃংখল বিশ্ব জগত কোন কারণ ছাড়াই উদ্দেশ্যহীনভাবে দূর্ঘটনা বশতঃ সৃষ্টি হয়েছেসুতরাং সুশৃংখল ব্যবস্থাপনায় নিয়ন্ত্রিত এ বিশ্বজগত এক মহান স্রষ্টারই সৃষ্টিযিনি তার অসীম জ্ঞান ও শক্তির মাধ্যমে এ বিশ্বজগতকে সৃষ্টি করেছেনএই সৃষ্টিজগতকে একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে তিনি এগিয়ে নিয়ে যানসৃষ্টিজগতের ছোট বড় সকল কারণই ঐ মহান স্রষ্টাতে গিয়ে সমাপ্ত হয়বিশ্বে সকল কিছুই তার আয়ত্বের মধ্যে এবং তার দ্বারা প্রভাবিতএ জগতের সকল অস্তিত্বই তার মুখাপেক্ষীকিন্তু একমাত্র তিনি কারো মুখাপেক্ষী ননতিনি অন্য কোন শর্ত বা কারণের ফলাফল ও নন  আল্লাহর একত্ববাদ এ সৃষ্টিজগতের যে কোন কিছুর প্রতিই আমরা লক্ষ্য করি না কেন, তাকে সসীম হিসেবেই দেখতে পাবকারণ, সবকিছুই কার্য কারণ নিয়মনীতির অধীনকোন কিছুই এ নীতির বাইরে নয়অর্থা সৃষ্টিজগতে সকল অস্তিত্বই সীমাবদ্ধনির্দিষ্ট সীমার বাইরে কোন অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যাবে নাশুধুমাত্র সর্বস্রষ্টা আল্লাহ‌ই এমন এক অস্তিত্বের অধিকারী, যার কোন সীমা বা পরিসীমা কল্পনা করা সম্ভব নয়কেননা তিনি নিরংকুশ অস্তিত্বের অধিকারীযেভাবেই কল্পনা করি না কেন, তার অস্তিত্ব অনস্বীকার্যতার অস্তিত্ব কোন শর্ত বা কারণের সাথেই জড়িত নয়আর নয় কোন শর্ত বা কারণের মুখাপেক্ষীএটা খুবই স্পষ্ট ব্যাপার যে, অসীম ও অনন্য অস্তিত্বের জন্যে সংখ্যার কল্পনা করা অসম্ভবকেননা আমাদের কল্পিত প্রতিটি দ্বিতীয় সংখ্যাই প্রথম সংখ্যার চেয়ে ভিন্ন হবেযার ফলে দুটো সংখ্যাই সীমিত ও সমাপন যোগ্য হবে দুটোই তাদের নিজস্ব সীমারেখায় বন্দী হবেকারণ কোন একটি অস্তিত্বকে যদি আমরা অনন্য ও অসীম হিসেবে কল্পনা করি, তাহলে তার সমান্তরালে অন্য কোন অনস্তিত্বের কল্পনা অসম্ভব হয়ে পড়বেতবুও যদি তা কল্পনা করার চেষ্টা করি, তাহলে একমাত্র প্রথম অস্তিত্বই পুনঃকল্পিত হবেতাই অসীম অস্তিত্ব সম্পন্ন মহান আল্লাহ একতার কোন শরীক বা অংশী নেই। [জংগে জামালেরযুদ্ধের সময় জনৈক আরব বেদুঈন হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর কাছে এসে প্রশ্ন করল ঃ হে আমিরূল মুমিনীন আপনি কি বলেন, আল্লাহ এক? আরব বেদুইনের এ ধরণের অসময়োচিত প্রশ্নে উপস্থিত সকলে বিরক্ত হয়ে ঐ ব্যক্তিকে আক্রমন করে বলল: হে বেদুইন! তুমি কি দেখতে পাচ্ছনা যে, আমিরুল মুমিনীন এখন এ যুদ্ধের ব্যাপারে কেমন মানসিক ব্যস্ততার মধ্যে কাটাচ্ছেন? হযরত আমিরূল মুমিনীন আলী (আ.) বললেনঃ ‘‘ওকে ছেড়ে দাও! ঐ আরব বেদুইন তাই চাচ্ছে, যা আমরা এই দলের (যুদ্ধরত প্রতিপক্ষ) কাছে চাচ্ছি’’অতঃপর তিনি ঐ আরব বেদুইনকে লক্ষ্য করে বললেনঃ ‘‘এই যে বলা হয়ে থাকে আল্লাহ একএ কথার চারটি অর্থ রয়েছেএ চারটি অর্থের মধ্যে দুটো অর্থ শুদ্ধ নয়এ ছাড়া বাকী দুটো অর্থই সঠিকঐ ভুল অর্থ দুটো হচ্ছে, এ রকম যেমনঃ কেউ যদি বলে যে, আল্লাহ এক এবং এ ব্যাপারে (আল্লাহর একত্ববাদ) যদি সংখ্যার ভিত্তিতে কল্পনা করেতাহলে এ ধরণের একত্ববাদের অর্থ সঠিক নয়কারণঃ যার কোন দ্বিতীয় নেই, সেটা কখনোই সংখ্যা মূলক হতে পারে নাতোমরা কি দেখছো না যে, খৃষ্টানরা আল্লাহর ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসী হবার কারণে কাফেরে পরিণত হয়েছে? এর (আল্লাহর একত্ববাদ) অন্য একটি ভুল অর্থ হচ্ছে এই যে, যেমন অনেকেই বলেঃ অমুক অনেক মানুষের মধ্যে একজনঅর্থা অমুক রহিম, করিম খালেদের মতই একজন সমগোত্রীয় মানুষ মাত্র। (অথবা অমুক তার সমগোত্রীয়দেরই একজন।) আল্লাহর ব্যাপারে এ ধরণের অর্থও কল্পনা করা ভুলকারণ এটা এক ধরণের সাদৃশ্য মূলক কল্পনাআর আল্লাহ যে কোন সাদৃশ্য মূলক বিষয় থেকে পবিত্রআর আল্লাহর একত্ববাদের দুটো সঠিক অর্থের একটি হচ্ছে, যেমন কেউ বলেঃ আল্লাহ একঅর্থা এ সৃষ্টিজগতে তার সাদৃশ্য কিছুই নেইআল্লাহ প্রকৃতই এ রকমঅন্য অর্থটি হচ্ছে এই যে, কেউ বলে ঃ আল্লাহ একঅর্থা তাঁর কোন আধিক্য সম্ভব নয়তিনি বিভাজ্যও নন বাস্তবে যেমন সম্ভব নয়, চিন্তাজগতে কল্পনা করাও তেমনি সম্ভব নয়এটাই আল্লাহর স্বরূপ। (বিহারূল আনোয়ার, ৬৫ নং পৃষ্ঠা।)হযরত ইমাম আলী (আ.) আরো বলেছেনঃ আল্লাহকে এক হিসেবে জানার অর্থই তাঁর পরিচিতি লাভ করা। (বিহারূল আনোয়ার, ২য় খন্ড, ১৮৬ নং পৃষ্ঠা। )অর্থা মহান আল্লাহর অসীম ও অবিনশ্বর অস্তিত্বের প্রমাণই তাঁর একত্ববাদ প্রমাণের জন্য যথেষ্ট কারণঃ অসীম অস্তিত্বের জন্যে দ্বিতীয়ের কল্পনা আদৌ সম্ভব নয়।]  আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলী একটি মানুষকে যদি আমরা বুদ্ধিবৃত্তিগত ভাবে বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখতে পাব যে, মানুষের একটি সত্তা রয়েছেআর তা তার মনুষ্য-বিশ্বাষত্ব বৈ কিছুই নয়এর পাশাপাশি তার মধ্যে আরও কিছু বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলী বিদ্যমান, যা তার সত্তার সাথে সম্মিলিতভাবে সনাক্ত হয়যেমন ঃ অমুকের ছেলে অত্যন্ত জ্ঞানী ও কর্মপটু এবং দীর্ঘাঙ্গী ও সুন্দর, অথবা এর বিপরীত গুণাবলী সম্পন্নএখানে লক্ষ্যণীয় যে, প্রথম গুণটি (অমুকের ছেলে) ঐ ব্যক্তির সত্তার সাথে ওপ্রোতভাবে জড়িত, যা তার সত্তা থেকে পৃথক করা সম্ভব নয়কিন্তু উপরোক্ত ২য় ও ৩য় গুণটি অর্থা জ্ঞান ও কর্মদক্ষতাকে তার সত্তা থেকে পৃথক করা বা পরির্বতন সাধন সম্ভবযাই হোক, উপরোক্ত গুণাবলীই (পৃথক করা সম্ভব হোক বা নাই হোক) ঐ ব্যক্তির প্রকৃত সত্তা নয়আর প্রতিটি গুণাবলীই একটি থেকে আরেকটি আলাদাআর এ বিষয়টিই (মূলসত্তা ও গুণাবলীর ব্যবধান ও গুণাবলীর পারস্পরিক পার্থক্য) সত্তা ও গুণাবলীর সীমাবদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে সর্বোত্তম দলিল ও প্রমাণকারণঃ সত্তা যদি অসীম হত্‌, তাহলে গুণাবলীকে অবশ্যই তা পরিবেষ্টন করতআর পরিণতিতে সবগুলোই একাকার হয়ে একে রূপান্তরিত হতসেক্ষেত্রে পূর্বোল্লেখিত মানুষের সত্তা, জ্ঞান, কর্মদক্ষতা, দীর্ঘাঙ্গীতা এবং সৌন্দর্য সবই একই অর্থে রূপান্তরিত হতঅর্থা সবগুলো অর্থই একই অর্থের পরিচায়ক হতউপরোক্ত আলোচনায় এটা স্পষ্ট হয় যে, মহান আল্লাহর সত্তার জন্যে (পূর্বোক্ত অর্থে) পৃথকভাবে গুণাবলী প্রমাণ করা সম্ভব নয়কারণঃ গুণাবলী তাঁর জন্যে অসীম হতে পারে নাআর তাঁর পবিত্র সত্তা যেকোন ধরণের সীমাবদ্ধতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত  আল্লাহর গুণাবলীর অর্থ এই সৃষ্টিজগতে পূর্ণাঙ্গতা বা উন্নতির চরম উকর্ষ তার এমন অনেক বিষয়ের কথাই আমাদের জানা আছে, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বিভিন্ন গুণাবলীর ছত্রছায়ায়এগুলো সবই ইতিবাচক গুণাবলী যার মধ্যে ই এসব গুণাবলীর বহিঃপ্রকাশ ঘটে, ফলে সেসকল বস্তুকে পূর্ণাঙ্গতর এবং উন্নতরূপ প্রদান করেএকইভাবে ঐসব গুণাবলী প্রকাশিত মাধ্যমের অস্তিত্বগত মূল্য বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছেআমরা বিষয়টিকে মানুষের সাথে পাথরের মত নিষপ্রাণবস্তু অস্তিত্বগত মূল্যের পার্থক্য ও তার তুলনা করে স্পষ্ট বুঝতে পারিএ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে, এসকল পূর্ণত্ব ও উন্নতি মহান আল্লাহ‌ই সৃষ্টি ও দান করেছেনতিনি যদি নিজেই ঐসব গুণাবলীর অধিকারী না হতেন, তাহলে অন্যদেরকে তা দান করতে পারতেন নাফলে অন্যদেরকেও পূর্ণাঙ্গতর করতে পারতেন নাএ কারণেই সকল সুস্থ বুদ্ধিবৃত্তি সম্পন্ন বিশ্বাসই এ ব্যাপারে একমত পোষণ করবেন যে, এ বিশ্ব জগতের সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই মহাজ্ঞান ও শক্তির অধিকারী এবং তিনি সকল প্রকৃত পূর্ণাঙ্গ তার অধিকারীযেমনটি ইতিপূর্বে আলোচিত হয়েছে, জ্ঞান ও শক্তির লক্ষণ প্রকৃতপক্ষে জীবদ্দশারই পরিচায়কআর এটা সৃষ্টিজগতের ব্যবস্থাপনাগত নিয়ম শৃংখলার বৈশিষ্ট্যকিন্তু যেহেতু মহান আল্লাহর অস্তিত্ব অনন্য ও অসীম, তাই পূর্ণাঙ্গতার এসব গুণাবলী, যা আমরা তার জন্য প্রমাণ করতে চাচ্ছি, তা মূলতঃ তার সত্তারই স্বরূপঅর্থা তাঁর গুণাবলীই তাঁর সত্তা এবং তাঁর সত্তাই তাঁর গুণাবলীর পরিচায়ক। [৬ষ্ট ইমাম হযরত জাফর সাদিক (আ.) বলেন: মহান আল্লাহ স্থির অস্তিত্বের অধিকারীতিনি নিজেই তাঁর জ্ঞানতাঁর জন্য জ্ঞাত বিষয়ের কোন অস্তিত্ব নেইতিনি নিজেই তাঁর শ্রবণ ক্ষমতাতাঁর জন্য শ্রুত বিষয়ের কোন অস্তিত্ব নেইতিনি নিজেই তাঁর দর্শন ক্ষমতাতাঁর জন্য দৃষ্ট বিষয়ের কোন অস্তিত্ব নেইতিনি নিজেই তাঁর শক্তির পরিচায়ক তাঁর জন্য প্রয়োগকৃত শক্তির কোন অস্তিত্ব নেই। (বিহারূল আনোয়ার, ২য় খন্ড , ১২৫ নং পৃষ্ঠা।) এ বিষয়ে আহলে বাইতগণের (আ.) অসংখ্য হাদীস রয়েছেএ ব্যাপারে নাহজুল বালাগা’ ‘তাওহীদে আইউনবিহারূল আনোয়ার, (২য় খন্ড গ্রন্থসমূহ দ্রষ্টব্য)] তবে তাঁর সত্তা ও গুণাবলীর মধ্যে এবং গুণসমূহের পাস্পরিক যে পার্থক্য আমরা উপলব্ধি করি, তা শুধুমাত্র তাত্বিক পর্যায়েই সীমাবদ্ধএছাড়া সত্তা ও গুণাবলী প্রকৃতপক্ষে একত্রেই পরিচায়ক এবং একই মুদ্রার এপিঠ ও ওপিঠ বৈ অন্য কিছুই নয়মহান আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলী কখনোই পরস্পর বিভাজ্য নয়ইসলাম এ বিষয়ক মৌলিক বিশ্বাসের ব্যাপারে তার অনুসারীদেরকে এ ধরণের অনাকাংখিত ভুল [পঞ্চম, ষষ্ট ও অষ্টম ইমাম রেজা (আ.) বলেনঃ মহা প্রভু এমন এক জ্যোতি, যার সাথে কখনো আধাঁরের সংমিশ্রন ঘটতে পারে নাতিনি এমন এক জ্ঞানের অধিকারী, যেখানে অজ্ঞতার কোন উপস্থিতিই কল্পনা করা আদৌ সম্ভব নয়তিনি এমন এক জীবনের অধিকারী, যেখানে মৃত্যুর কোন ছোঁয়া পড়তে পারে না। (বিহারূল আনোয়ার ২য় খন্ড ১২৯ পৃষ্ঠা।) অষ্টম ইমাম (আ.) বলেনঃ প্রভুর গুণাবলীর ক্ষেত্রে মানুষেরা তিনটি মতে বিভক্ত।] থেকে বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহর গুণাবলীকে ইতিবাচক ও নেতিবাচক রূপে দুভাগে ভাগ করেছে। [(ক) অনেকে প্রভুর গুণাবলী প্রমাণ করতে অন্যদের সাথে ঐ গুণাবলীর তুলনা করেন     (খ) আবার অনেকে গুণাবলী সমূহকে অস্বীকার করেনএই দৃষ্টিভঙ্গীটি সঠিক, যা অন্য সকল প্রকারের গুনাবলীর সাথে তুলনা না করেই প্রভুর গুণাবলী প্রমাণ করে।]তাই এ বিষয়ে ইসলামের নির্দেশ অনুযায়ী সঠিক বিশ্বাসের স্বরূপ হচ্ছে এ রকম: মহান আল্লাহ‌ জ্ঞানীকিন্তু তাঁর জ্ঞান অন্যদের জ্ঞানের মত নয়মহান আল্লাহ‌ শক্তিশালীকিন্তু তাঁর শক্তি অন্যদের শক্তির মত নয়তিনি সর্বশ্রোতাতবে অন্যদের মত কান দিয়ে শুনার প্রয়োজন তাঁর হয় নাতিনি সর্বদ্রষ্টাকিন্তু, দেখার জন্য অন্যদের মত চোখের প্রয়োজন তাঁর নেইএভাবে তার অন্য সকল গুণাবলীই সম্পূর্ণরূপে স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ও তুলনাহীন। [সুরা আশ্‌ শুরা, ১১ নং আয়াত।]  ঐশী গুণাবলীর ব্যাখ্যাগুণাবলী দুপ্রকার: পূর্ণত্বমূলক গুণাবলী এবংত্রুটিমূলক গুণাবলী যেমনটি পূর্বে উল্লেখ করেছি যে, পূর্ণত্বমূলক গুণাবলী মূলতঃ ইতিবাচক অর্থ প্রদান করেকারণ ঃ প্রথম শ্রেণীর মাধ্যমে গুণান্বিত বিষয়ের অস্তিত্বের মানগত মূল্য বৃদ্ধি পায়আর তা গুনান্বিত বিষয়ের ইতিবাচক অস্তিত্ব গত সুফলের প্রাচুর্য্য আনায়ন করেউদাহরণ স্বরূপ জ্ঞানী, শক্তিশালী ও জীবন- অস্তিত্বের সাথে জ্ঞান ও শক্তি বিহীন মৃত বস্তুর তুলনামূলক পার্থক্যের সুস্পষ্ট ব্যাপারটি উল্লেখযোগ্যকিন্তুত্রুটিমূলক গুণাবলী’ ‘শ্রেষ্ঠত্বের গুণাবলীরসম্পূর্ণ বিপরীতএই ত্রুটিমূলক গুণাবলীঅর্থের দিকে যদি আমরা গভীরভাবে লক্ষ্য করি, তাহলে দেখতে পাব যে, এটা প্রকৃতপক্ষে নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যএটা হচ্ছে ঃ পূর্ণাঙ্গ তা বা শ্রেষ্ঠত্বের অভাব, যা ঐগুণে গুণান্বিত বিষয়ের অস্তিত্বের মানগত মূল্যহীনতার পরিচায়কযেমন ঃ মুর্খতা, অক্ষমতা, শ্রীহীনতা, অসুস্থতা ইত্যাদিসুতরাং নেতিবাচক গুণাবলীর অস্বীকৃতি প্রকৃতপক্ষে ইতিবাচক গুণাবলীরই স্বীকৃতি বটেযেমন ঃ মুর্খতার অভাবের অর্থই জ্ঞানের অস্তিত্বঅক্ষমতাহীনতা অর্থ সক্ষমতাএ কারণেই পবিত্র কুরআন সকল শ্রেষ্ঠত্ব মূলক বা ইতিবাচক গুণাবলীকেই মহান আল্লাহর বেশিষ্ট্য হিসেবে প্রমাণ করেআর সকল ত্রুটিমূলক বা নেতিবাচক গুণাবলীকেই আল্লাহর ব্যাপারে অস্বীকার করেযেমন ঃ পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছেঃ ‘‘তিনি জীবিত, তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়আর জেনে রেখো, তোমরা আল্লাহ‌কে পরাভুত করতে পারবে নাযে বিষয়টি আমাদের সবার দৃষ্টিতে থাকা উচিত, তা হল, মহান আল্লাহ‌ স্বয়ং এক নিরংকুশ অস্তিত্বের অধিকারী, যার কোন সীমা বা শেষ নেইআর এ কারণেই তাঁর জন্য বিবেচিত শ্রেষ্ঠ্যত্ব ও পূর্ণাঙ্গতার গুণাবলীও অবশ্যই অসীম হবেমহান আল্লাহ কোন জড়বস্তু বা দেহের অধিকারী ননতিনি স্থান বা সময় দ্বারা সীমাবদ্ধ ননসবধরণের অবস্থাগত বৈশিষ্ট্য, যা নিয়ত পরির্বতনশীল, তা থেকে তিনি মুক্তমহান আল্লাহর জন্যে প্রকৃতই যেসব বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলী আরোপিত হয় তা সব ধরণের সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ততাই পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে ঃ তিনি কোন কিছুরই সদৃশ নন। [ষষ্ট ইমাম হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেনঃ মহান আল্লাহকে সময়, স্থান, গতি, স্থানান্তর অথবা স্থিরতার ন্যায় গুণাবলী দ্বারা গুণান্বিত করা সম্ভব নয়বরঞ্চ, তিনিই স্থান, কাল, গতি, স্থানান্তর ও স্থিরতার স্রষ্টা। (বিহারূল আনোয়ার, ২য় খন্ড, ৯৬ নং পৃষ্ঠা।)]  কার্য সংক্রান্ত গুণাবলী ঃ পূর্বোক্ত শ্রেণী বিন্যাস ছাড়াও গুণাবলীর আরও শ্রেণী বিন্যাস রয়েছেযেমন ঃ সত্তাগত গুণাবলী এবংকার্য সংক্রান্ত গুণাবলী ঃ যেসব গুণাবলী সত্তার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তাকেই সত্তাগত গুণাবলী বলেযেমনঃ মানুষের জীবন, জ্ঞান ও শক্তি, আমরা মানুষের সত্তাকে অন্য কিছু কল্পনা না করে শুধুমাত্র উপরোক্ত গুণাবলীর দ্বারাই বিশেষিত করতে পারিকিন্তু এমন অনেক গুণাবলী রয়েছে, যা বিশেষত্বের সত্তার মধ্যে নিহিত নয়ঐধরণের গুণ বা বৈশিষ্ট্য দ্বারা বিশেষিত হতে হলে অন্য কিছুর বাস্তবায়ন প্রয়োজনএ ধরণের গুণাবলীই কার্যসংক্রান্ত গুণাবলী নামে পরিচিত যেমন ঃ লেখক, বক্তা ইত্যাদিআমরা তখনই একজন মানুষকে লেখক হিসেবে বিশেষিত করব, যখন তার পাশাপাশি কাগজ, কালি, কলম ও লেখাও কল্পনা করা হবেতেমনি যখন শ্রোতার অস্তিত্ব কল্পনা করব, তখন একজন মানুষকে বক্তা হিসেবে বিশেষিত করতে পারবতাই শুধুমাত্র মানুষের সত্তা বা অস্তিত্বের কল্পনা এ ধরণের গুণাবলী বাস্তবায়নের জন্য যথেষ্ট নয়উপরোক্ত আলোচনায় এ বিষয়টি সুস্পষ্ট হল যে, মহান আল্লাহর প্রকৃত গুণাবলী এই প্রথম শ্রেণীর (সত্তাগত গুণাবলী) গুণাবলীর অন্তরভূক্তকিন্তু দ্বিতীয় শ্রেণীর গুণাবলীর অস্তিত্ব অন্য কিছুর বাস্তবায়নের উপর নির্ভশীলআর আল্লাহ ছাড়া অন্য যেকোন কিছুই আল্লাহরই সৃষ্টি এবং আল্লাহর পরই তার অস্তিত্বমহান আল্লাহ‌ তাঁর অস্তিত্ব দিয়েই ঐ সবকিছুকে অস্তিতশীল করেছেনতাই যেসব গুণাবলী অন্য কিছুর অস্তিত অর্জনের উপর নির্ভশীল, সে সব গুণাবলী অবশ্যই আল্লাহর সত্তাগত গুণাবলী বা সত্তার স্বরূপ নয়সৃষ্টি কার্য সম্পাদিত হওয়ার পর যেসব গুণাবলী দ্বারা মহান আল্লাহ গুণান্বিত হন, সেসব গুণাবলীকেই আল্লাহর কার্য সংক্রান্ত গুণাবলীবলা হয়যেমন ঃ স্রষ্টা, প্রতিপালক, জীবন দানকারী, মৃত্যু দানকারী, জীবিকা দাতা, ইত্যাদি হওয়ার গুণাবলী আল্লাহর সত্তার স্বরূপ নয়বরং এসব গুণাবলী আল্লাহর সত্তার সাথে সংযুক্ত অতিরিক্ত গুণাবলীকার্য সংক্রান্ত গুণাবলীবলতে সেসব গুণাবলীকেই বোঝায়, যা কোন কার্য সম্পাদিত হওয়ায় ঐ সম্পাদিত কার্য থেকে গৃহীত হয় ঐ গুণাবলী সত্তা থেকে গৃহীত হয় নাঅর্থা সম্পাদিত কার্যই ঐ গুণাবলীর উসস্থ, ঐ কার্যের কর্তা বা ঐ গুণাবলীর উ সত্তা নয়যেমন ঃ সৃষ্টিকার্য সম্পাদিত হওয়ার পরই মহান আল্লাহ‌ ঐ সৃষ্টিকার্যের কারণে স্রষ্টাহিসেবে বিশেষিত হনস্রষ্টাহওয়ার গুণটি ঐসব সৃষ্টবস্তুর মধ্যেই নিহিত, আল্লাহর সত্তার মধ্যে নয়এভাবে বিভিন্ন ধরণের কার্য সম্পাদিত হওয়ার পরই মহান আল্লাহর সত্তা ঐ কার্য সম্পাদনকারী হওয়ার গুণে ভূষিত হনআর এসব গুণাবলী তাঁর পবিত্র সত্তার সাথে সংশিষ্ট নয়কারণ ঃ কাজ সম্পাদনের উপর নির্ভরশীল এসব গুণাবলী সর্বদাই পরিবর্তনশীলতাই এসব গুণাবলী যদি আল্লাহর সত্তাগত গুণাবলীর অর্ন্তভূক্ত হত, তাহলে আল্লাহর সত্তাও পরিবর্তনশীল হতে বাধ্য, যা মহান আল্লাহর পবিত্র সত্তার ক্ষেত্রে কখনোই সম্ভব নয়শীয়াদের দৃষ্টিতে মহান আল্লাহর ইচ্ছা করা’ (ইচ্ছা করা অর্থা কিছু করতে চাওয়া বা কামনা করা) এবং কথোপকথন’ (কোন কিছুর অর্থের শাব্দিকরূপ) নামক গুণাবলী দুটোই তাঁর কার্য সংক্রান্ত গুণাবলীর অর্ন্তভূক্ত। [ষষ্ঠ ইমাম হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেছেনঃ মহান আল্লাহ সর্বদাই জ্ঞানী, কিন্তু এ জন্যে জ্ঞাত বস্তুর প্রয়োজন তার নেইতিনি সর্বদাই ক্ষমতাশীল, কিন্তু এ জন্যে কুক্ষিগত অস্তিত্বের প্রয়োজন তার নেইবর্ণনাকারী (রাবী) জিজ্ঞেস করেনঃ তিনি কি কথোপকথনকারী?” হযরত জাফর সাদিক (আ.) বললেনঃ কথা ধ্বংসশীলআল্লাহ ছিলেনকিন্তুকথাছিল নাঅতঃপর তিনি কথাসৃষ্টি করেন। (বিহারূল আনোয়ার, ২য় খন্ড, ১৪৭ নং পৃষ্ঠা। )অষ্টম ইমাম হযরত রেজা (আ.) বলেছেনঃ মানুষের ক্ষেত্রে ইচ্ছাতার অরের একটি অবস্থাতা তার ঐ অবস্থা অনুযায়ী কাজ সৃষ্টি হয়কিন্তুইচ্ছাআল্লাহর ক্ষেত্রে কোন সৃষ্টি বা বাস্তবায়নের নামান্তর মাত্রকেননা, আমাদের মত চিন্তা ধারণা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজন আল্লাহর নেই। (বিহারূল আনোয়ার, ৩য় খন্ড ১৪৪ নং পৃষ্ঠা।)] কিন্তুআহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতেরঅনুসারীদের অধিকাংশের মতেই মহান এ দুটো গুণাবলীই তাঁর জ্ঞাননামক গুণেরই অংশঅর্থা এ দুটো গুণাবলী তাঁর সত্তাগত গুণাবলীরইঅর্ন্তভূক্ত বলে তারা মনে করেন
Comments (0)
Add Comment