তাকলীদ

প্রঃ তাকলীদ কাকে বলে?
উঃ তাকলীদ-এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে অনুসরণ করা। সুতরাং কোন মুজতাহীদের নির্দেশাবলীর অনুসরণ করাই হচ্ছে তাকলীদ। (মাসয়ালা নং২)
তাকলীদ সংক্রান্ত বিস্তারিত মাসায়েল
প্রঃ ১ তাকলীদ কার জন্য করা কর্তব্য
?
উঃ মানুষ সাধারণভাবে ৩ শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত ঃ
(১) মুজতাহীদ
,
অথবা (২) মুজতাহীদের কাছাকাছি পর্যায়ের মান সম্পন্ন ব্যক্তি।
অথবা (৩) সাধারণ মানুষ
, যিনি উপরোক্ত দুই শ্রেণীরই বাইরে।

এখানে উপরের উল্লেখিত ৩য় শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত সকল সাধারণ মানুষের জন্যই কোন মুজতাহীদের তাকলীদ বা অনুসরণ করা একান্ত বা অপরিহার্য্য কর্তব্য অর্থাৎ ওয়াজিব। (মাস্লা নং-১)
প্রঃ ২ কাকে তাকলীদ বা অনুসরণ করা উচিত?
উঃ নিম্নোল্লেখিত সকল শর্তাবলী বা বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন মুজতাহীদকেই তাকলীদ বা অনুসরণ করা উচিত-
এখানে প্রথমেই যে প্রশ্নটি সবার মনে আসে তা হ
ল মুজতাহীদ কে এবং কাকে বলা হয়?
উঃ- মুজতাহীদ- মুজতাহীদ হচ্ছেন ইসলামের জ্ঞানে জ্ঞানী এবং কোরান ও হাদীস থেকে নিজের অর্জিত জ্ঞান
, পাণ্ডিত্ব ও প্রজ্ঞার সাহায্যে মানুষের জীবনের সাথে জড়িত সকল ধরনের আইন ও নীতি মালা প্রমাণ সহকারে প্রণয়ন করার মত ক্ষমতা ও যোগ্যতা রাখেন। অর্থাৎ এক কথায় তাকে ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞ ও বলা যেতে পারে। অবশ্য এখানে উল্লেখ করা দরকার যে সকল মুজতাহীদই আলেম, কিন্তু সকল আলেমই মুজতাহীদ নন।
একজন অনুসরণ যোগ্য মুজতাহীদের যোগ্যতার শর্তাবলী ঃ-
তাঁকে অবশ্যই ১. পুরুষ হতে হবে।
২. সাবালক হতে হবে।
৩. আকেল বা সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন হতে হবে।
৪. ১২ ইমামের অনুসারী শীয়া হতে হবে।
৫. পিতা-মাতার বৈধ সন্তান হতে হবে (যারজ নয় এমন)
,
৬. জীবত হতে হবে।
৭. ন্যায় পরায়ণ হতে হবে।
৮. সমসাময়িক বাকী সকল (জীবিত) মুজতাহীদের তুলনায় অধিকতর জ্ঞানী হতে হবে। এবং
৯. ইহ্তিয়াতে-ওয়াজীব (সর্তকতামূলক-ওয়াজীব) হচ্ছে
, তিনি অবশ্যই দুনিয়া লোভী হতে পারবেন না। (মাসয়ালা নং-২)

প্রঃ ৩ কোন্ কোন্ ব্যাপারে মুজতাহীদের তাকলীদ করা ওয়াজীব?
উঃ ১- উসুলেদ্বীন অর্থাৎ দ্বীন-ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসগত (ইমান সংক্রান্ত) ব্যাপারে কারও তাকলীদ বা অন্ধ অনুসরণ করা যাবে না।
এবং দ্বীন ইসলামের ফুরুয়ে-দ্বীন অর্থাৎ ব্যবহারিক-আইনগত অংশের অতি জরুরী বা ……. ব্যাপারগুলোর বিষয়েও কারও তাকলীদ করা যাবে না। যেমনঃ নামায ও রোজার ওয়াজীব হবার ব্যাপারে
, যা কিনা মৌলিকভাবে একটি স্বতঃ সিদ্ধ ও প্রমাণিত ব্যাপার,এক্ষেত্রে কোন মুজতাহীদের মতামত গ্রহণের মুখাপেক্ষি হওয়া যাবে না।

২- শুধুমাত্র ফুরুয়ে দ্বীন বা আইনগত অংশের সুক্ষাতিসুক্ষ বিষয় গুলোর ব্যাপারেই মুজতাহীদের অনুসরণ করতে হবে।
প্রঃ ৪ সমগ্র মানব জীবনের জন্য ইসলাম প্রণীত প্রয়োজনীয় সকল আইন মালা বা ইসলামী আহ্কাম/নির্দেশাবলী মোট কত প্রকার?
উঃ এই সকল ইসলামী আহকাম বা নির্দেশাবলী মোট মোট ৫ ভাগে বিভক্তঃ
১- ওয়াজীব- যে ইসলামী নির্দেশ বা হুকুমটি পালন করা অবশ্যই কর্তব্য এবং যা পালন না করলে একজন সাবালক ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা “মুকাল্লাফ” (পরে এর ব্যাখ্যা দেওয়া হবে) গুণাহগার বা পাপী হিসাবে সাব্যস্ত হবে
, সে সব ইসলামী আহকাম বা নির্দেশাবলীকেই ওয়াজীব বলা হয়।
২- মুস্তাহাব- যে সকল ইসলামী-আহকাম্ বা নির্দেশাবলী পালন করা বাঞ্চনীয় বা অত্যন্ত পছন্দনীয় ব্যাপার এবং তা পালন করলে অনেক সওয়াব বা পুন্যের অধিকারী হওয়া যায়
, কিন্তু কেউ তা পালন না করলে দোষী বা পাপী সাব্যস্ত হবে না, সে গুলোকেই মুস্তাহাব বলা হয়ে থাকে।
৩- মুবাহ্- যে সকল কাজ করা এবং না করা দু
টোই ইসলামের দৃষ্টিতে সমান। অর্থাৎ,যা করলেও কোন সওয়াব বা পূন্য নেই, আবার না করলেও কোন গুণাহ নেই। যেমন খাওয়া,পান করা ইত্যাদি।
৪- হারাম- যে সকল কাজ করার প্রতি ইসলাম নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে এবং যা করার কারণে গুণাহগার বা পাপী বলে সাব্যস্ত হতে হবে
, তাই হারাম বা অবৈধ হিসাবে পরিচিত।
৫- মাকরুহ্- যে সকল কাজ ইসলামের দৃষ্টিতে অবাঞ্চনীয় বা অপছন্দনীয়
, কিন্তু কেহ তা করলেও পাপী বা গুণাহগার হবে না তাকেই মাকরুহ বলে।

একজন মানুষের সারা জীবনের সমগ্র কাজ কর্মগুলোকেই আমরা উপরোক্ত ৫ ভাগের অন্তর্ভূক্ত করতে পারি। অর্থাৎ হয় তা ওয়াজীব হবে অথবা তা হারাম হবে, অথবা তা মুবাহ্ বা মাকরুহ্ বা মুস্তাহাব হবে এবং অবশ্যই এর বাহিরে অন্য কিছুই হবে না।

প্রঃ ৫ তাকলীফ কি জিনিষ?
উঃ তাকলীফ একটি আরবী শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে দায়িত্ব বা কর্তব্য। আমাদের বর্তমান আলোচনার ক্ষেত্রে যখন তাকলীফ শব্দটি ব্যবহৃত হবে
, তার অর্থ হবে আমাদের উপর ন্যাস্ত ইসলামী শরিয়াতী দায়িত্ব।

প্রঃ ৬ মুকাল্লাফ্ কাকে বলে?
উঃ মুকাল্লাফ্ অর্থ দায়িত্বশীল। অর্থাৎ যাঁর উপর কোন ইসলামী তাকলীফ্ বা দায়িত্ব ন্যাস্ত হয়েছে
,এক কথায় যার উপর ইসলামী শরিয়তের সকল বিধান ন্যাস্ত হয়েছে। অর্থাৎ তাঁর জন্য ইসলামী শরিয়তের বিধান গুলো সম্পূর্ণ রূপে মেনে চলা ওয়াজীব।

প্রঃ ৭ একজন ব্যক্তির মুকাল্লাফ্ হওয়ার শর্তাবলী কি?
উঃ একজন ব্যক্তিকে মুকাল্লাফ্ হতে হলে তাঁকে-
সাবালক হতে হবে। এবং
সম্পূর্ণ সুস্থ্য মস্তিষ্কের অধিকারী হতে হবে।

প্রঃ ৮ একজন ব্যক্তির সাবালক হওয়ার লক্ষণ বা শর্তাবলী কি কি?
উঃ নিম্নোল্লেখিত ৩টি লক্ষণের যে কোন একটি লক্ষণ পাওয়া গেলেই আমরা তাঁকে সাবালক হিসাবে গণ্য করতে পারি ঃ
১। তলপেটের নিম্ন দেশে কিছু শক্ত লোম গজানো। বা
২। বীর্য্যপাত ঘটা/স্বপ্ন দোষ হওয়া। বা
৩। ১৫ বৎসর (চন্দ্রবর্ষ/আরবী বছর হিসেবে) পূর্ণ হওয়া পুরুষের জন্য।
৯ বৎসর (চন্দ্রবর্ষ/আরবী বছর হিসেবে) পূর্ণ হওয়া মেয়েদের জন্য।

Comments (0)
Add Comment